রাজস্থানের জয়সলমীরে ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে পাকিস্তানের গুপ্তচরবৃত্তির (Pakistani Spy) সন্দেহে আটক করা হয়েছে। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স) কর্তৃক আটকের পর তাকে কোতোয়ালি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা জয়সলমীরে এই মাসে চতুর্থ গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আটক ব্যক্তির নাম জীবন খান, যিনি জয়সলমীরের সানকাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পূর্বে সামরিক এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন, যা তাকে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহের সুযোগ দিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, জীবন খান মঙ্গলবার সামরিক স্টেশনে পুনরায় প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন, যখন তাকে গেটে থামানো হয়। তার মোবাইল ফোন পরীক্ষা করার পর সন্দেহজনক কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া যায়, যার ফলে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা তাকে আটক করে। পরবর্তীতে তাকে মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় জীবন খান জানিয়েছেন যে তার পাকিস্তানে আত্মীয় রয়েছে, যা তদন্তকারীদের কাছে আরও সন্দেহের কারণ হয়েছে। তাকে যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্রে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার) নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে একাধিক নিরাপত্তা সংস্থা তার সঙ্গে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
জয়সলমীর, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, সাম্প্রতিক সময়ে গুপ্তচরবৃত্তির একাধিক ঘটনার জন্য খবরে এসেছে। এই মাসের শুরুতে, ১৩ আগস্ট, চন্দন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জের কাছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) গেস্ট হাউসের একজন চুক্তিভিত্তিক ম্যানেজার মহেন্দ্র প্রসাদকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
রাজস্থান সিআইডি (নিরাপত্তা) জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ডের আলমোরার বাসিন্দা মহেন্দ্র প্রসাদ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন এবং ডিআরডিও বিজ্ঞানীদের গতিবিধি এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও অস্ত্র পরীক্ষার সংবেদনশীল তথ্য পাঠাচ্ছিলেন।
এই ঘটনাগুলি ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নিরাপত্তার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। জয়সলমীরের চন্দন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ এবং পোখরান ফায়ারিং রেঞ্জ ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং অস্ত্র পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকায় ডিআরডিও এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যা গুপ্তচরদের জন্য একটি আকর্ষণীয় লক্ষ্য।
জীবন খানের মতো ব্যক্তিরা, যারা সামরিক এলাকায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, তারা সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহের জন্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে সহজ লক্ষ্য হয়ে উঠতে পারেন।
এই ঘটনার পটভূমিতে, রাজস্থান পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তাদের নজরদারি বাড়িয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছিল, যার ফলে এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। জয়সলমিরের মতো সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক রয়েছে এবং স্থানীয় জনগণের কাছে সন্দেহজনক কার্যকলাপের তথ্য প্রদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
জীবন খানের আটকের ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়েছে, বিশেষ করে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর। এই ধরনের ঘটনাগুলি দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা এবং গোয়েন্দা কার্যকলাপের একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জয়সলমীরের স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সমর্থন করার জন্য প্রস্তুত, তবে সীমান্ত এলাকায় ক্রমবর্ধমান গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা অর্জুন সিং বলেন, “পাকিস্তানের এই ধরনের উস্কানি অগ্রহণযোগ্য। আমাদের সেনাবাহিনীকে এর জবাব দেওয়া উচিত।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে। সামরিক এলাকায় কর্মরত ব্যক্তিদের পটভূমি যাচাই এবং তাদের কার্যকলাপের উপর কড়া নজরদারি আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জীবন খানের মামলায় তদন্ত এখনও চলছে, এবং তার মোবাইল ফোনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করতে পারে।
উৎসবের আগেই সুখবর! সেপ্টেম্বরেই সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বৃদ্ধির সম্ভাবনা
এই ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের জন্য একটি সতর্কবার্তা। জয়সলমীরে মতো সংবেদনশীল এলাকায় গোয়েন্দা কার্যকলাপ রোধ করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সমন্বয় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।