বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজ্যসভা ও লোকসভা (Lok and rajya sabha) মুলতুবি রাখা হয়েছে। সংসদের উভয় কক্ষে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বিরোধী দলগুলির তীব্র প্রতিবাদের কারণে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধী স্বরকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মোদী সরকার দেশে সুপার ইমারজেন্সি লাগু করতে চাইছেন।” তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
সংসদে কী ঘটল?
সকালে লোকসভা এবং রাজ্যসভার(Lok and rajya sabha) অধিবেশন শুরু হতেই বিরোধীরা বিভিন্ন ইস্যুতে স্লোগান তুলতে থাকেন। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, মণিপুর পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার কার্যকলাপ নিয়ে বিরোধীরা সরব হন। ফলে উভয় কক্ষেই কার্যত হট্টগোল শুরু হয়। অধিবেশন ঠিকমতো চালানো সম্ভব না হওয়ায় স্পিকার এবং চেয়ারম্যান অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
বিরোধীদের অভিযোগ
বিরোধী দলগুলির মতে, সংসদে কোনও আলোচনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুগুলি উত্থাপন করতে গেলেই মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বা সদস্যদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে। তৃণমূলের ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,
“এভাবে গণতন্ত্র চলতে পারে না। সরকার সংসদে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর চেপে দিয়ে ‘সুপার ইমারজেন্সি’র পরিবেশ তৈরি করছে। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময়ও মানুষ প্রতিবাদ করেছিল, আজও মানুষ প্রতিবাদ করবে।”
কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং আম আদমি পার্টির প্রতিনিধিরাও একই সুরে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন। তাঁদের বক্তব্য, গণতান্ত্রিক কাঠামোর মূল স্তম্ভই ধ্বংস করার পথে হাঁটছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
সরকার পক্ষের প্রতিক্রিয়া
তবে শাসকদল বিজেপির দাবি, বিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে সংসদের কাজকর্ম ব্যাহত করছেন। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিল(Lok and rajya sabha) পাশ করা বাকি রয়েছে, কিন্তু বিরোধীরা হট্টগোল করে তা আটকাচ্ছেন। সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, “দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সংসদে বিল নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। কিন্তু বিরোধীরা শুধুই স্লোগান দিচ্ছেন। এর ফলে দেশের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
আগামী বছরেই দেশে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিরোধীরা একজোট হয়ে সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে। সংসদকে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করে সরকারবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করছেন তাঁরা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরোধীদের এই কৌশল মূলত জনমত গড়ে তোলার জন্য। অন্যদিকে, সরকারও বিরোধীদের ‘অগণতান্ত্রিক আচরণ’-এর অভিযোগ তুলে তাঁদের কোণঠাসা করতে চাইছে।
‘সুপার ইমারজেন্সি’ প্রসঙ্গ
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থাপিত ‘সুপার ইমারজেন্সি’ শব্দবন্ধ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জরুরি অবস্থা মানে যেখানে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার পর্যন্ত খর্ব হয়। তাঁর অভিযোগ, আজ সরাসরি জরুরি অবস্থা ঘোষণা না হলেও, বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তারি, কেন্দ্রীয় সংস্থার লাগাতার চাপ, সংবাদমাধ্যমে সরকারি প্রভাব—সব মিলিয়ে একপ্রকার অঘোষিত সুপার ইমারজেন্সি চলছে দেশে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
সংসদে এই অচলাবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও হতাশা বাড়ছে। সাধারণ ভোটারদের বক্তব্য, রাজনীতিবিদরা কেবল পরস্পরের দিকে আঙুল তুলেই সময় নষ্ট করছেন। তাঁদের আশা, সংসদে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনায় জোর দেওয়া হবে, কারণ মূল্যবৃদ্ধি থেকে বেকারত্ব—সবকিছুই সরাসরি প্রভাব ফেলছে তাঁদের জীবনে।