বাংলার টেক স্টার্টআপের জন্য বেসরকারি বনাম সরকারি সমর্থনের তুলনা

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের একটি উদীয়মান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে টেক স্টার্টআপের (Tech Startups) ক্ষেত্রে। ২০২৫ সালে কলকাতা এবং রাজ্যের অন্যান্য…

Private vs. Government Support for Tech Startups in Bengal: A 2025 Comparison

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের একটি উদীয়মান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে টেক স্টার্টআপের (Tech Startups) ক্ষেত্রে। ২০২৫ সালে কলকাতা এবং রাজ্যের অন্যান্য অংশে টেক স্টার্টআপগুলি বেসরকারি এবং সরকারি উভয় ক্ষেত্র থেকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন পাচ্ছে। তবে, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং সরকারি প্রকল্পের মধ্যে পার্থক্য, তাদের প্রভাব এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই নিবন্ধে আমরা পশ্চিমবঙ্গে টেক স্টার্টআপের জন্য বেসরকারি এবং সরকারি সমর্থনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করব, ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে।

সরকারি সমর্থন: প্রকল্প এবং নীতি
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার টেক স্টার্টআপের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেছে, যা আর্থিক সহায়তা, অবকাঠামো, এবং নিয়ন্ত্রক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্য রাখে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকল্প হল:

   

স্টার্টআপ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্টার্টআপ বেঙ্গল প্ল্যাটফর্ম (startupbengal.in) কলকাতায় একটি স্টেট স্টার্টআপ রিসোর্স সেন্টার (SRC) এবং ২৩টি জেলায় অ্যাক্সিলারেশন সেন্টার (AC) স্থাপন করেছে। এই উদ্যোগটি অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং ব্যবসায়িক সমর্থকদের একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের ফান্ডিংয়ের সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও, এটি স্টার্টআপগুলির জন্য নিয়ন্ত্রক সমস্যা সমাধানে দ্রুত ট্র্যাক স্ট্যাটুটরি সাপোর্ট প্রদান করে।

স্টার্টআপ ইন্ডিয়া সিড ফান্ড স্কিম (SISFS): কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পটি টেক-ভিত্তিক স্টার্টআপগুলির জন্য প্রুফ অফ কনসেপ্ট, প্রোটোটাইপ উন্নয়ন, এবং বাজার প্রবেশের জন্য ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গের স্টার্টআপগুলি এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১-২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩,৬০০ উদ্যোক্তাকে সমর্থন পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

SAMRIDH স্কিম: মিনিস্ট্রি অফ ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (MeitY) দ্বারা পরিচালিত এই প্রকল্পটি আইটি-ভিত্তিক স্টার্টআপগুলির জন্য ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফান্ডিং প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গের টেক স্টার্টআপগুলি, বিশেষ করে AI, ফিনটেক, এবং হেলথটেক ক্ষেত্রে, এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হচ্ছে।

ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ফর স্টার্টআপস (CGSS): এই প্রকল্পটি স্টার্টআপগুলির জন্য ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত কোলাটারাল-ফ্রি ঋণের গ্যারান্টি প্রদান করে। ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের ৪৬টি স্টার্টআপকে ১৩২.১৩ কোটি টাকার গ্যারান্টি প্রদান করা হয়েছে।

এগিয়ে বাংলা: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এমএসএমই বিভাগ এবং আইআইএম-কলকাতা ইনোভেশন পার্কের সহযোগিতায় চালু এই প্রতিযোগিতা ৪০টি উদ্ভাবনী ধারণাকে ১ কোটি টাকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডের জন্য প্রতিযোগিতার সুযোগ দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার প্রান্তিক সিনহার ট্র্যাশ বুম প্রকল্প এই প্রতিযোগিতায় ৩ লক্ষ টাকা জিতেছে।

Tech Startups, Startup Funding India, Govt Tech Scheme Bengal, Private Investment, Tech Startups
সরকারি প্রকল্পগুলি নন-ডিলুটিভ ফান্ডিং প্রদান করে, যা স্টার্টআপগুলিকে ইকুইটি ছাড়াই আর্থিক সহায়তা পেতে সাহায্য করে।
ট্যাক্স ছাড়, পেটেন্ট ফাইলিংয়ে ভর্তুকি, এবং নিয়ন্ত্রক সহজীকরণ স্টার্টআপগুলির জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করে।
স্টার্টআপ বেঙ্গলের মতো উদ্যোগগুলি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ইনকিউবেশন এবং মেন্টরশিপ প্রদান করে।

চ্যালেঞ্জ:
জটিল আবেদন প্রক্রিয়া এবং বিলম্বিত তহবিল বিতরণ অনেক স্টার্টআপের জন্য বাধা।
ছোট এবং প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব।
প্রকল্পগুলি প্রায়শই নির্দিষ্ট খাত বা DPIIT-স্বীকৃত স্টার্টআপের উপর কেন্দ্রীভূত, যা অনেককে বাদ দেয়।

Advertisements

বেসরকারি সমর্থন: ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর
বেসরকারি বিনিয়োগ পশ্চিমবঙ্গের টেক স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ক, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড, এবং বেসরকারি ইনকিউবেটরগুলি উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক এবং কৌশলগত সমর্থন প্রদান করে।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল: পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ক এবং মুম্বাই অ্যাঞ্জেলসের মতো নেটওয়ার্কগুলি স্টার্টআপগুলিতে বিনিয়োগ করছে। ২০১৪-২০১৯ সালের মধ্যে কলকাতার স্টার্টআপগুলি ৩৭টি ডিলে ৪৩.৭৩ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।

ইনকিউবেটর এবং অ্যাক্সিলারেটর: আইআইএম-কলকাতা ইনোভেশন পার্ক এবং প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানগুলি বেসরকারি-সরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম চালাচ্ছে। এগুলি মেন্টরশিপ, নেটওয়ার্কিং, এবং বাজারে প্রবেশের সুযোগ প্রদান করে।
উচ্চ গড় ফান্ডিং: ২০১৯ সালে, পশ্চিমবঙ্গের মাত্র চারটি স্টার্টআপ স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার ফান্ড অফ ফান্ডস থেকে ৪৮.৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা প্রতি স্টার্টআপে গড়ে সর্বোচ্চ ফান্ডিং নির্দেশ করে।

সুবিধা:
বেসরকারি বিনিয়োগ দ্রুত এবং নমনীয়, যা স্টার্টআপগুলিকে দ্রুত স্কেল করতে সাহায্য করে।
অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা কৌশলগত দিকনির্দেশনা এবং শিল্প সংযোগ প্রদান করে।
বাজার-চালিত পদ্ধতি স্টার্টআপগুলিকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করে।

চ্যালেঞ্জ:
বেসরকারি ফান্ডিং প্রায়শই ইকুইটি দাবি করে, যা স্টার্টআপের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে।
বিনিয়োগকারীরা উচ্চ রিটার্ন আশা করে, যা তরুণ স্টার্টআপের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
ফান্ডিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কলকাতা-কেন্দ্রিক, গ্রামীণ বা টিয়ার-২ শহরের স্টার্টআপগুলি কম সুযোগ পায়।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

  • আর্থিক সহায়তা: সরকারি প্রকল্পগুলি নন-ডিলুটিভ ফান্ডিং এবং কোলাটারাল-ফ্রি ঋণ প্রদান করে, যা প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্টআপগুলির জন্য আদর্শ। বেসরকারি ফান্ডিং, যদিও দ্রুত, ইকুইটি দাবি করে এবং উচ্চ রিটার্নের প্রত্যাশা রাখে।
  • অ্যাক্সেসযোগ্যতা: সরকারি প্রকল্পগুলির জটিল আবেদন প্রক্রিয়া এবং সচেতনতার অভাব অ্যাক্সেসযোগ্যতা হ্রাস করে। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা বেশি নির্বাচনী, শুধুমাত্র উচ্চ সম্ভাবনার স্টার্টআপে ফোকাস করে।
  • ইনকিউবেশন এবং মেন্টরশিপ: স্টার্টআপ বেঙ্গল এবং আইআইএম-কলকাতা ইনোভেশন পার্কের মতো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব উভয়ের সুবিধা প্রদান করে। তবে, বেসরকারি ইনকিউবেটরগুলি বাজার-ভিত্তিক মেন্টরশিপে বেশি কার্যকর।
  • প্রভাব: সরকারি প্রকল্পগুলি সামাজিক প্রভাব এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের উপর জোর দেয়, যেমন কৃষি এবং হেলথটেক। বেসরকারি ফান্ডিং উচ্চ-বৃদ্ধি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে যেমন ফিনটেক এবং AI-এর উপর বেশি মনোযোগী।

সমাধানের পথ

  • হাইব্রিড মডেল: সরকার এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে আরও অংশীদারিত্ব, যেমন স্টার্টআপ বেঙ্গল, ফান্ডিং এবং মেন্টরশিপের সমন্বয় ঘটাতে পারে।
  • সচেতনতা প্রচার: গ্রামীণ এবং টিয়ার-২ শহরের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
  • সরলীকৃত প্রক্রিয়া: সরকারি ফান্ডিংয়ের আবেদন প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং দ্রুত বিতরণ নিশ্চিত করা।
  • টেক-কেন্দ্রিক ইনকিউবেটর: কলকাতায় AI, ফিনটেক, এবং হেলথটেকের জন্য বিশেষায়িত ইনকিউবেটর স্থাপন করা।

পশ্চিমবঙ্গে টেক স্টার্টআপগুলি সরকারি এবং বেসরকারি সমর্থনের একটি সমন্বিত ইকোসিস্টেম থেকে উপকৃত হচ্ছে। সরকারি প্রকল্পগুলি নন-ডিলুটিভ ফান্ডিং এবং নিয়ন্ত্রক সুবিধা প্রদান করে, যখন বেসরকারি বিনিয়োগ দ্রুত তহবিল এবং বাজার-ভিত্তিক মেন্টরশিপ নিয়ে আসে। তবে, উভয় ক্ষেত্রেই অ্যাক্সেসযোগ্যতা এবং সচেতনতার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং সরলীকৃত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ২০২৫ সালে টেক স্টার্টআপের জন্য একটি শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।