হাওড়া শহরে এবার থেকে বাড়িতে কুকুর পোষা (Pet Dogs) এত সহজ আর থাকছে না। হাওড়া পুরসভা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কুকুরকে পোষ্য হিসেবে রাখতে হলে মালিককে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। শুধু তাই নয়, লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে দিতে হবে মালিকের আধার কার্ড এবং কুকুরের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট। ফি ধার্য করা হয়েছে ১৫০ টাকা এবং প্রতিবছর এই লাইসেন্স রিনিউ করতে হবে।
হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “কুকুর পুষতে গেলে অনলাইনে পুরসভার কাছে লাইসেন্সের আবেদন করতে হবে। সঙ্গে আধার কার্ড, কুকুরের টিকাকরণের সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।” মূলত শহরের কোন কোন বাড়িতে কুকুর রাখা হচ্ছে, তার পূর্ণাঙ্গ নথি রাখতে চাইছে পুরসভা। কেবলমাত্র ভারতীয় প্রজাতির কুকুর নয়, বিদেশি জাতের কুকুরের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর হবে।
শহরে অনেকেই আবার ব্যবসার উদ্দেশ্যে নিজেদের কুকুরের প্রজনন করিয়ে ছোট ছোট ছানা বিক্রি করেন। পুরসভার নতুন নীতিমালার ফলে সেসব ক্ষেত্রেও লাইসেন্স ছাড়া আর কুকুর পোষা বা বিক্রি করা যাবে না। এর ফলে অবৈধ ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ আসবে বলেই মনে করছে প্রশাসন।
কুকুরের পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিদেশি পাখি রাখার ক্ষেত্রেও লাইসেন্স চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। এই বিষয়ে সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে কুকুর দিয়ে শুরু হচ্ছে, তারপর ধাপে ধাপে অন্য বিদেশি পোষ্যদের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
শহরে বাড়ির কুকুরের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পথকুকুরের সংখ্যা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার কুকুরদের কারণে অনেক সময় রাস্তায় চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়ছে। খাবারের সন্ধানে তারা মানুষকে তাড়া করছে, কামড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
শহরের বাসিন্দারা তাই শুধু পোষ্য কুকুর নয়, বরং পথকুকুরদের নিয়েও পদক্ষেপ নিতে পুরসভাকে অনুরোধ করেছেন। তাঁদের দাবি, দ্রুত নির্বীজকরণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।
এ বিষয়ে হাওড়া পুরসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, “এটা ঠিক শহরে পথকুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। তাই নির্বীজকরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে চুক্তি হবে।”
অন্যদিকে, হাওড়ার কুকুরপ্রেমীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, বাড়ির কুকুরের জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি সঠিকভাবে প্রতিটি কুকুরের রেকর্ড থাকবে। এতে পোষ্যদের টিকাকরণ এবং চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
সব মিলিয়ে হাওড়া পুরসভার নতুন নির্দেশিকায় স্পষ্ট, আধার কার্ড জমা দিয়ে লাইসেন্স ছাড়া আর কুকুর রাখা যাবে না। প্রতিবছর নির্দিষ্ট ফি দিয়ে রিনিউ করতেও হবে লাইসেন্স। আর খুব শিগগিরই বিদেশি পাখিদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চালু হবে।
এই নীতিমালা একদিকে যেমন শহরের পোষ্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে পথকুকুরের বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণেও বড় ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।