কোন কোন আয় করমুক্ত? ITR–এ রিপোর্টের সম্পূর্ণ তালিকা জেনে নিন

আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার সময় সাধারণত আমরা শুধু করযোগ্য আয়ের কথাই ভাবি। অনেকেই মনে করেন করমুক্ত আয়ের কোনো গুরুত্ব নেই, তাই তা রিটার্নে উল্লেখ…

Confused About ITR Forms

আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার সময় সাধারণত আমরা শুধু করযোগ্য আয়ের কথাই ভাবি। অনেকেই মনে করেন করমুক্ত আয়ের কোনো গুরুত্ব নেই, তাই তা রিটার্নে উল্লেখ করাও প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ধারণা ভুল। কারণ, করমুক্ত আয়ের উপর কর দিতে না হলেও, সেটি রিটার্নে দেখানো বাধ্যতামূলক।

“করমুক্ত আয় করযোগ্য নয়, তবে ITR–এ ‘Exempt Income’ শিডিউলে তা প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক,” জানিয়েছেন নিশান্ত খেমানি, ম্যানেজিং পার্টনার, স্যাটার্ন কনসাল্টিং গ্রুপ (সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া)। অনেক করদাতা এই ধাপটি এড়িয়ে যান এবং পরে অযথা কর দপ্তরের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন। ফলে, স্বচ্ছতার স্বার্থে এবং ভবিষ্যতে আর্থিক লেনদেন ব্যাখ্যা করতে সুবিধার জন্য করমুক্ত আয়ও রিটার্নে উল্লেখ করা জরুরি।

   

কর রিটার্ন কেবল করযোগ্য আয় নয়, বরং সমগ্র অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রতিফলন। এর মধ্যে করমুক্ত আয়ও অন্তর্ভুক্ত। যদি মোট আয় মৌলিক করমুক্ত সীমার বেশি হয় বা কোনো কারণে রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক হয়, তবে করমুক্ত আয় অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে।

অনেক সময় করদাতার Annual Information Statement (AIS)-এ করমুক্ত আয় সংক্রান্ত তথ্য আগে থেকেই থাকে। সেই ক্ষেত্রে ITR-এ যদি তা উল্লেখ না করা হয়, তবে অসঙ্গতি ধরা পড়তে পারে। এর ফলে রিটার্ন ভেরিফিকেশনের জন্য ফ্ল্যাগ হতে পারে এবং রিফান্ড দেরি হতে পারে।

আবার, যদি কোনো ব্যক্তি বছরে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি অর্থ সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন, তবে ব্যাংক সেই তথ্য সরাসরি আয়কর দপ্তরে পাঠায়। যদি করদাতা আগেই করমুক্ত আয়ের উৎস প্রকাশ না করে থাকেন, তবে সেই টাকার উৎস বোঝানো কঠিন হয়ে যেতে পারে।

কোন কোন আয় করমুক্ত কিন্তু জানানো বাধ্যতামূলক?
আয়কর আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী অনেক ধরনের আয় করমুক্ত। তবে এগুলো ITR–এ প্রকাশ করা আবশ্যক। নিচে প্রধান কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলোঃ
1. ভবিষ্যনিধি ও পিপিএফ (PPF):
ভবিষ্যনিধি (PF) অ্যাকাউন্ট ও পিপিএফ থেকে প্রাপ্ত সুদ সম্পূর্ণ করমুক্ত (ধারা 10(11))।
৫ বছরের বেশি সময়ের পরে PF উত্তোলনও করমুক্ত (ধারা 10(12))।

2. সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা:
এই প্রকল্প থেকে সুদ ও পরিপক্ব অর্থ করমুক্ত (ধারা 10(11A))।

3. লাইফ ইন্স্যুরেন্স:
জীবনবিমার পলিসি মেয়াদপূর্তির টাকা করমুক্ত (ধারা 10(10D)), যদি বার্ষিক প্রিমিয়াম নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে।

4. ছুটি ভাতা (Leave Encashment):
অবসর নেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীরা সম্পূর্ণ করমুক্ত সুবিধা পান।
বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য আংশিক করমুক্ত (ধারা 10(10AA))।

5. অবসান ক্ষতিপূরণ ও VRS সুবিধা:
চাকরি হারানোর ক্ষতিপূরণ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে করমুক্ত (ধারা 10(10B))।
VRS-এ একবারে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত (ধারা 10(10C))।

6. করমুক্ত বন্ডের সুদ:
এনএইচএআই (NHAI), আরইসি (REC) ইত্যাদি সংস্থার করমুক্ত বন্ড থেকে পাওয়া সুদ করমুক্ত (ধারা 10(15))।

Advertisements

7. উপহার:
নির্দিষ্ট আত্মীয়ের কাছ থেকে পাওয়া উপহার বা বিবাহ/বিশেষ অনুষ্ঠানে পাওয়া উপহার করমুক্ত (ধারা 56(2)(x))।

8. স্কলারশিপ ও পুরস্কার:
শিক্ষাবৃত্তি সম্পূর্ণ করমুক্ত (ধারা 10(16))।
সরকার অনুমোদিত পুরস্কারও করমুক্ত (ধারা 10(17A))।

9. গ্র্যাচুইটি:
সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ করমুক্ত।
বেসরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত (ধারা 10(10))।

10. পারিবারিক আয় (HUF ও পার্টনারশিপ):
হিন্দু অবিভক্ত পরিবার (HUF) থেকে প্রাপ্ত আয় করমুক্ত (ধারা 10(2))।
পার্টনারশিপ ফার্মের লাভের অংশ পার্টনারের হাতে করমুক্ত, কারণ ফার্ম নিজেই কর প্রদান করে (ধারা 10(2A))।

11. কৃষি আয়:

কৃষি থেকে প্রাপ্ত আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত (ধারা 10(1))।
তবে যদি কৃষি আয় ৫,০০০ টাকার বেশি হয়, তবে Schedule EI-তে আলাদা হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক।

আইনে করমুক্ত আয় না দেখানোর জন্য সরাসরি কোনো জরিমানা নেই। কিন্তু এতে জটিলতা তৈরি হতে পারে। যেমন – হঠাৎ করে যদি বড় অঙ্কের পিপিএফ বা বিমার টাকা ব্যাঙ্কে জমা হয়, অথচ তা আগে ITR–এ দেখানো না থাকে, তবে কর দপ্তরের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। আবার, রিফান্ডও আটকে যেতে পারে বা দেরি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করমুক্ত আয় প্রকাশ করাকে অনেকেই আনুষ্ঠানিকতা মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে এটি স্বচ্ছতা বজায় রাখে, ভবিষ্যতে আর্থিক লেনদেন ব্যাখ্যা সহজ করে এবং কর দপ্তরের সন্দেহের ঝুঁকি কমায়।

করযোগ্য আয়ের পাশাপাশি করমুক্ত আয়ও ITR–এ জানানো প্রত্যেক করদাতার দায়িত্ব। এতে কোনো আর্থিক ক্ষতি হয় না, বরং ভবিষ্যতের অপ্রয়োজনীয় জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কর বিশেষজ্ঞ উমেশ জেঠানি যেমন বলেছেন – “আজকে করমুক্ত আয় প্রকাশ করলে আগামী দিনে টাকা জমার উৎস ব্যাখ্যা করতে সহজ হবে।” তাই কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় শুধু করযোগ্য আয়ের উপর নজর না দিয়ে, করমুক্ত আয়ও যথাযথভাবে রিপোর্ট করা অত্যন্ত জরুরি।