Credit Card হারিয়ে গেলে কী করবেন? জেনে নিন প্রতারণা এড়ানোর উপায়

বর্তমান সময়ে ক্রেডিট কার্ড (Credit Card ) শুধু একটি অর্থ লেনদেনের মাধ্যম নয়, বরং জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন শপিং, বিল পরিশোধ থেকে শুরু…

Kotak Mahindra Bank Launches New Premium Credit Card

বর্তমান সময়ে ক্রেডিট কার্ড (Credit Card ) শুধু একটি অর্থ লেনদেনের মাধ্যম নয়, বরং জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন শপিং, বিল পরিশোধ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন খরচ— সর্বত্র এর ব্যবহার বাড়ছে দ্রুতগতিতে। তবে এর জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রতারণা ও আর্থিক জালিয়াতির ঝুঁকি। সম্প্রতি দেশে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত প্রতারণার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কারও কার্ড হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।

ক্রেডিট কার্ড হারানো নিঃসন্দেহে মানসিক চাপ তৈরি করে। তবে এই পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে শুধু অর্থ সুরক্ষাই নয়, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত পরিচয় বা আইডেন্টিটি চুরির মতো বড় সমস্যাও এড়ানো সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রতারকদের হাতিয়ারও বদলাচ্ছে। ফলে সতর্কতা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।

   

প্রথম এবং সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ হলো আপনার ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে যোগাযোগ করা। প্রায় সব ব্যাংকই ২৪ ঘণ্টার কাস্টমার কেয়ার সেবা দেয়, যা এই ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়ক হয়। ফোন কল ছাড়াও নিচের উপায়ে কার্ড ব্লক করা সম্ভব—
নেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে
মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে
ব্যাংকের গ্রিভান্স রিড্রেসাল টিমে ইমেইল পাঠিয়ে
কার্ড হারানোর পরই দ্রুত ব্লক করে দেওয়া হলে প্রতারকের পক্ষে অননুমোদিত লেনদেন করার সুযোগ থাকে না।

শুধু ব্যাংকে জানানো নয়, স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ অভিযোগ ভবিষ্যতের তদন্তে সহায়ক হয় এবং প্রতারণা থেকে আপনাকে আইনগত সুরক্ষা দেয়। একই সঙ্গে আইডেন্টিটি থেফট বা পরিচয় চুরির ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনে।

কার্ড ব্লক করার পরও দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। নিয়মিত ব্যাংক স্টেটমেন্ট, অনলাইন অ্যাকাউন্ট এবং লেনদেনের ওপর কড়া নজর রাখা উচিত। খুব ছোট অংকের সন্দেহজনক লেনদেনও অবিলম্বে ব্যাংককে জানাতে হবে।

Advertisements

এছাড়াও বড় ক্রেডিট ব্যুরোগুলোর কাছে ফ্রড অ্যালার্ট চালু করলে প্রতারকেরা আপনার নামে নতুন কোনো অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। নিয়মিত ক্রেডিট রিপোর্ট পরীক্ষা করলে কোনো অস্বাভাবিক অনুসন্ধান বা ভুল তথ্য দ্রুত ধরা পড়বে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের সবসময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলা উচিত—
প্রতিটি ফাইন্যান্স অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও জটিল পাসওয়ার্ড, পিন ও ওটিপি ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
ট্রানজ্যাকশন অ্যালার্ট চালু রাখুন যাতে সঙ্গে সঙ্গে SMS বা ইমেইলের মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায়।
অসুরক্ষিত পাবলিক ওয়াই-ফাই বা অচেনা কম্পিউটারে কখনো আর্থিক লেনদেন করবেন না।
কেবলমাত্র HTTPS যুক্ত নিরাপদ ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করুন।
আপনার কার্ড নম্বর, CVV, পিন, OTP বা বারকোড কখনোই কাউকে শেয়ার করবেন না।
প্রকাশ্য স্থানে কার্ড অসতর্কভাবে ফেলে বা খোলা অবস্থায় রাখবেন না।

আজকাল অনেক ব্যাংকই চিপ-এনাবল্ড কার্ড, কন্ট্যাক্টলেস পেমেন্ট এবং ভার্চুয়াল ওয়ালেট-এর মতো উন্নত প্রযুক্তি দিচ্ছে। এগুলো ব্যবহারে সুরক্ষার মাত্রা অনেকটাই বাড়ে। তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের এই সুবিধাগুলো গ্রহণ করা উচিত।

যদি কোনো ব্যাংক প্রতারণা বা অভিযোগ সমাধানে বিলম্ব করে, তবে মনে রাখা দরকার— রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-র মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনে আপনি RBI বা ব্যাংকিং ওম্বাডসম্যান-এর কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন।
দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সতর্ক থাকা ও সচেতনভাবে লেনদেন করাই একমাত্র পথ। মনে রাখবেন—

দ্রুত পদক্ষেপ নিলে ক্ষতি এড়ানো যায়
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমে যায়
প্রযুক্তি ও সতর্কতার মিশ্রণেই তৈরি হয় সুরক্ষা ঢাল
অতএব, আপনার ক্রেডিট কার্ড হারালে আতঙ্কিত না হয়ে উপরোক্ত পদক্ষেপ নিন। এতে আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি কমবে, পরিচয় সুরক্ষিত থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে আপনার আর্থিক স্বাস্থ্য অটুট থাকবে।