বর্ষা মানেই চাষের জমিতে নতুন সবুজের ছোঁয়া, বাজারে টাটকা শাকসবজির সম্ভার। কিন্তু এবার ছবিটা যেন উল্টো। বর্ষা আসতেই সবজির বাজারে শুরু হয়েছে আগুন দাম। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো থেকে শুরু করে পটল, ঝিঙে, বেগুন—একেবারে রোজকার রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় সবজিগুলির দাম ছুঁয়েছে আকাশ। ফলে হাঁপিয়ে উঠেছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলি।
বাজারের পরিস্থিতি
কলকাতার বিভিন্ন খুচরো বাজারে ঘুরে দেখা যাচ্ছে, টমেটো প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ফুলকপি একেকটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙে ও পটল কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচালঙ্কা ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি সাধারণ আলুর দামও আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। ফলে রান্নার ঝোল পাতলা করেও সংসার চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
কেন বাড়ছে দাম?
পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর বর্ষার শুরুতেই অতিবৃষ্টি হয়েছে। মাঠের ফসল নষ্ট হয়েছে প্রচুর। চাষের জমিতে জল জমে থাকায় ফসল ঠিক মতো ফলেনি। গ্রাম থেকে শহরে সবজি আসার সরবরাহও অনেকটাই কমে গেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবহণ খরচের চাপ। পেট্রোল-ডিজেলের দাম যেভাবে বাড়ছে, ট্রাকে করে পাইকারি সবজি আনতে গিয়েও খরচ অনেক বেড়েছে। এই সব মিলিয়ে বাজারে সবজির দাম হুহু করে বাড়ছে।
সাধারণ মানুষের অসুবিধা
বাজারে গিয়ে এক কেজি করে সবজি কেনার সামর্থ্য হারাচ্ছেন বহু মানুষ। আগে যেখানে ২০০-৩০০ টাকায় সপ্তাহের জন্য টাটকা সবজি মিলত, সেখানে এখন দিনে দিনে খরচ হচ্ছে ২০০ টাকা বা তারও বেশি। অনেকেই বাধ্য হয়ে বিকল্প খুঁজছেন—কখনও ডাল-ভাত, কখনও ডিমের ঝোল বা আলুর তরকারি দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এক কথায়, মধ্যবিত্তের ভাতের থালায় এখন রঙিন সবজি নয়, বরং অঙ্কের হিসাবই বড় হয়ে উঠেছে।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য
পাইকারি বাজারের এক ব্যবসায়ী জানালেন, “বর্ষায় সবজির দাম বাড়াটা প্রতি বছরই হয়। তবে এবার অতিবৃষ্টির কারণে সরবরাহে ঘাটতি বেড়েছে। মাঠ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি আসছে না। ফলে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী জোগান নেই। এর ফলে দাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি।” তিনি আরও জানান, আগামী এক-দু’মাস এই পরিস্থিতি চলতে পারে। নতুন ফসল বাজারে এলে তবে দাম কিছুটা কমবে।
সরকারের ভূমিকা
রান্নার বাজারে আগুন দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতিমধ্যেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। বাজার পরিদর্শন শুরু হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। পাইকারি বাজারে জোগান বাড়ানোর দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, ফেয়ার প্রাইস শপ বা সুলভ দরে সবজি বিক্রির উদ্যোগও নেওয়া হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। তবে এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সমাধানের রাস্তা
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সবজি উৎপাদনে পরিকল্পিত নীতি গ্রহণ জরুরি। বর্ষা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যাতে সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত না হয়, তার জন্য কৃষকদের আরও আধুনিক প্রযুক্তি, সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। পাশাপাশি, বাজারে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো রুখতে কঠোর নজরদারি চালানো দরকার।