ডার্বি জয়ের আনন্দ এখনও মুছে যায়নি লাল-হলুদ (East Bengal) সমর্থকদের চোখেমুখে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রবিবারের সেই ডার্বি জয় যে নতুন মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ করে তুলেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারিয়ে চলতি ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে অস্কার ব্রুজোর (Oscar Bruzon) দল। আর এবার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ডায়মন্ড হারবার এফসি।
২০ আগস্ট যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনেই হবে এই লড়াই। ডার্বির আবেগ সামলে উঠে নতুন করে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে মশালবাহিনী। সমর্থকরা যেমন গ্যালারিতে রঙের উৎসবে মাততে প্রস্তুত। তেমনই কোচ অস্কার ব্রুজোও জানিয়ে দিলেন, আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। কারণ একদিকে আত্মবিশ্বাস থাকলেও, অন্যদিকে রয়েছে কার্ড এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাও।
ডার্বিতে হামিদকে দিয়ে শুরু করলেও চোটের কারণে মাত্র ১৭ মিনিটেই তাঁকে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন অস্কার। বদলি হিসেবে নামা দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস জোড়া গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। শেষমেশ ২-১ গোলে ডার্বি জিতে সেমিফাইনালের ছাড়পত্র সংগ্রহ করে ইস্টবেঙ্গল। সেই জয় লাল-হলুদ শিবিরে যে নতুন উদ্দীপনা জাগিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
তবে সামনে যে লড়াই আরও কঠিন, তা নিয়ে একেবারেই দ্বিধা করছেন না অস্কার। ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “আমাদের কাছে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। একটা হাইভোল্টেজ ম্যাচ খেলার মাত্র দুই দিনের মধ্যে আবার সেমিফাইনাল খেলতে নামছি। প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখার কোনও সুযোগ নেই।” অন্যদিকে ডায়মন্ড হারবারের কোচ কিবু ভিকুনাও আত্মবিশ্বাসী। তাঁর সোজা কথা, “ওরা যদি ভালো দল হয়, তবে আমরাও কম নই। না হলে সেমিফাইনালে আসতাম না।” ফলে বুধবার যুবভারতীর মাটিতে দেখা যাবে অভিজ্ঞ দুই স্প্যানিশ কোচের মগজাস্ত্রের লড়াই।
দলে বিদেশিদের সংখ্যা ও মানের নিরিখে ইস্টবেঙ্গল অনেকটাই এগিয়ে। ডায়মন্ড হারবার মাত্র দুই বিদেশি নিয়ে নামছে। তবে ইস্টবেঙ্গলও সমস্যামুক্ত নয়। হামিদের চোট, রশিদের দেশে ফিরে যাওয়া সব মিলিয়ে দলের ভারসাম্যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। যদিও রশিদ ফের ভারতে ফিরছেন, তবুও তাঁর খেলার নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
এছাড়া আরও এক বড় দুশ্চিন্তা অস্কারের সামনে কার্ড সমস্যা। দলের ছ’জন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারের কার্ড রয়েছে। বিদেশিদের মধ্যে সাউল ক্রেসপো, দিয়ামান্তাকস, মিগুয়েল এবং ভারতীয়দের মধ্যে সৌভিক চক্রবর্তী, মহম্মদ রাকিপ, লালচুংনুঙ্গা। ফলে সাবধানী খেলতে বাধ্য অস্কার ব্রুজো।
ডার্বির দলে পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই কোচ কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, “আমার আগেই আমার দলের খবর সবাই জেনে যাচ্ছে।” তবে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, দলের জয়ের ধারাকে বজায় রাখাটাই তাঁর মূল লক্ষ্য। পরিবর্তন আসবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে।
রশিদের প্রত্যাবর্তনের খবর ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। সমর্থকরা আশা করছেন, তিনি ফিরলে দলের মিডফিল্ড আরও শক্তিশালী হবে। অন্যদিকে অস্কার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কলকাতা লিগ ও ডুরান্ডে ডায়মন্ড হারবারের খেলা খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। ফলে কোনওভাবেই হালকাভাবে নিচ্ছেন না প্রতিপক্ষকে। তবে লাল-হলুদ কোচের ভাষায়, “মরসুমের শুরু থেকেই আমরা আমাদের খেলার ছন্দ ধরে রেখেছি। এখন লক্ষ্য শুধু সেটাকে ধরে রাখা। সেমিফাইনাল আমাদের জন্য যতটা কঠিন, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
ডায়মন্ডের বিপক্ষে জয় গুপ্তা খেলবেন কিনা প্রশ্নের উত্তরে অস্কার জানিয়ে দিলেন, ‘জয় গুপ্তার এখনও কিছু পেপার ওয়ার্ক বাকি এফসি গোয়ার সাথে। তাই ম্যাচের ৪৮ ঘন্টা আগে স্কোয়াডের নথিভুক্ত না হওয়ায়, আগামীকালের ম্যাচে তাকে পাওয়া যাবে না।”