ভারত সরকারের মৎস্য পালন, পশুপালন ও দুগ্ধ উৎপাদন মন্ত্রণালয় ২০২০-২১ অর্থবছর (Indian Economy)থেকে “প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা” (পিএমএমএসওয়াই) নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো মৎস্য খাতের টেকসই ও দায়িত্বশীল উন্নয়নের মাধ্যমে ‘নীল বিপ্লব’ আনা এবং মৎস্যজীবীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা।
এই প্রকল্পে ২০২০-২১ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ২০,০৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এটি ভারতের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্প মৎস্য উৎপাদন, গুণমান, প্রযুক্তি, ফসল সংগ্রহোত্তর পরিকাঠামো এবং বিপণনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর ঘাটতি পূরণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনার লক্ষ্য হলো মৎস্য খাতের উৎপাদন বাড়ানো, মৎস্যজীবীদের আয় দ্বিগুণ করা এবং এই খাতের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান বৃদ্ধি করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৮-১৯ সালে ১৩.৭৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদন ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ২২ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, মৎস্য খাতের অবদান কৃষি খাতের জিভিএ-তে ৭.২৮% থেকে ৯%-এ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্য রফতানি থেকে আয় ৪৬,৫৮৯ কোটি টাকা থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত করা এবং ফসল সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ২০-২৫% থেকে ১০%-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পিএমএমএসওয়াই-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আধুনিক ফসল সংগ্রহোত্তর পরিকাঠামো তৈরি করা। এই প্রকল্পের অধীনে গত পাঁচ বছরে (২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫) বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ২,৩৭৫.২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে স্থাপন করা হয়েছে ৭৩৪টি কোল্ড স্টোরেজ এবং আইস প্ল্যান্ট।
২৭,৩০১টি মৎস্য পরিবহন সুবিধা, যার মধ্যে রয়েছে, ১০,৯২৪টি মোটরসাইকেলে আইস বক্স, ৯,৪১২টি সাইকেলে আইস বক্স, ৩,৯১৫টি অটো রিকশা, ১,২৬৫টি লাইভ ফিশ ভেন্ডিং ইউনিট, ১,৪০৬টি ইনসুলেটেড ট্রাক।৩৭৯টি রেফ্রিজারেটেড ট্রাক, ৬,৪১০টি মৎস্য কিয়স্ক, ২০২টি খুচরা মৎস্য বাজার, ২১টি পাইকারি মৎস্য বাজার এবংমৎস্য বন্দরগুলোর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ।
এই সুবিধাগুলো মৎস্যজীবীদের মাছ সংরক্ষণ, পরিবহন এবং বিপণনে সহায়তা করছে, যা তাদের আয় বাড়াতে এবং ফসলের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করছে। পিএমএমএসওয়াই শুধুমাত্র পরিকাঠামো উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের জন্য বীমা সুবিধা, আর্থিক সহায়তা এবং কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (কেসিসি) প্রদান করা হচ্ছে।
২০১৯ সালে মৎস্যজীবীদের জন্য কেসিসি চালু করা হয়, এবং এখন পর্যন্ত ১.৮ লক্ষ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এছাড়া, গ্রুপ অ্যাকসিডেন্ট ইনস্যুরেন্স স্কিমের (জিএআইএস) আওতায় মৎস্যজীবীদের জন্য বীমার পরিমাণ ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে, যা মোট ২৬৭.৭৬ লক্ষ মৎস্যজীবীকে উপকৃত করেছে।
২০২৩ সালে ‘রিপোর্ট ফিশ ডিজিজ’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে, যা মৎস্য চাষিদের মাছের রোগ দ্রুত রিপোর্ট করতে এবং বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ পেতে সহায়তা করছে। এছাড়া, ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে পিএমএমএসওয়াই-এর অধীনে ৬,০০০ কোটি টাকার একটি নতুন উপ-প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে, যা মৎস্যজীবী, মাছ বিক্রেতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগীদের জন্য মূল্য শৃঙ্খল উন্নত করবে এবং বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা করবে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (এনইআর) মৎস্য খাতের উন্নয়নের জন্য পিএমএমএসওয়াই-এর অধীনে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনইআর-এর জন্য কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, যা মোট বিনিয়োগের ৭২% এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অংশের ৬৮.৩৯%। এই অঞ্চলের জন্য বিশেষ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মৎস্য চাষ, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং মৎস্যজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ।
২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের মৎস্য উৎপাদন ১৬.২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, এবং সমুদ্র থেকে রফতানি আয় ৫৭,৫৮৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত, পিএমএমএসওয়াই-এর অধীনে ১৪,৬৫৪.৬৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। তবে, এই খাতে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন—অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ঋণ ও বীমার সীমিত প্রবেশাধিকার, এবং রোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি।
আকাশে নিয়ন্ত্রণ কার? ভারত সহ এই ৫টি দেশের কক্ষপথে রয়েছে উন্নত সেনা স্যাটেলাইট
প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা ভারতের মৎস্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে। আধুনিক পরিকাঠামো, আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে এই প্রকল্প মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে এবং দেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান বাড়াচ্ছে। এই প্রকল্পের সাফল্য ভারতকে বিশ্বের শীর্ষ মৎস্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে।