অসমের জলসম্পদ, তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রী পিজুশ হাজারিকা সম্প্রতি একটি টুইটে গুয়াহাটি হাইকোর্টের(Guwahati High Court) একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “মাননীয় গৌহাটি হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে বলেছে যে, সংরক্ষিত বনভূমির উপর কোনো দখলদার অধিকার দাবি করতে পারে না। এমনকি পূর্বে ত্রুটির কারণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও, এই ধরনের দখল আইনি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে টিকতে পারে না।
আমরা আমাদের আদালত, আইন এবং সংবিধানের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” এই টুইট অসমে চলমান বনভূমি উচ্ছেদ অভিযানকে আরও জোরদার করার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গুয়াহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অশ্বিনী কুমার এবং বিচারপতি অরুণ দেব চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ সংরক্ষিত বনভূমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। আদালত অসম সরকারকে সংরক্ষিত বনভূমির চারপাশে বেড়া দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে যাতে ভবিষ্যতে দখল রোধ করা যায়।
এছাড়া, দখলদারদের ১৫ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের নোটিশের জবাব দিতে এবং আরও ১৫ দিনের মধ্যে জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত আরও বলেছে, যে সরকারি কর্মকর্তারা দখলের সময় নীরব ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই রায় অসমের বনভূমি সংরক্ষণে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মন্ত্রী পিজুশ হাজারিকা তাঁর টুইটে গৌহাটি হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, অসম সরকার আইন ও সংবিধানের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করবে। তিনি এর আগেও বনভূমি দখল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত জুলাই মাসে তিনি বলেছিলেন, অসমে প্রায় চণ্ডীগড়ের সমান এলাকা অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি গুয়াহাটির আদিঙ্গিরি পাহাড়ের নাম ‘কুদরতপুর’ হিসেবে পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে অসমের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু জমির বিষয় নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও পরিচয় রক্ষার লড়াই।”
অসমে বনভূমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য সরকার বেশ কিছুদিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে। সম্প্রতি গোলাঘাট জেলার নামবর দক্ষিণ সংরক্ষিত বনে প্রায় ১০০০ বিঘা জমি উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে ৩৫০টিরও বেশি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া, রেঙ্গমা সংরক্ষিত বনে ২৬ হেক্টর জমি, যা প্রায় ৬৫টি ফুটবল মাঠের সমান, উদ্ধার করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, রাজ্যে এখন পর্যন্ত ১.২৯ লক্ষ বিঘা জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। তিনি এই উচ্ছেদ অভিযানকে সমর্থন করে বলেছেন, এটি বনভূমি সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
এই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে বিরোধী দলগুলো সমালোচনা করেছে। রাইজর দলের বিধায়ক অখিল গগৈ অভিযোগ করেছেন, এই অভিযানের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করা হচ্ছে এবং জমি কর্পোরেট হাউসের জন্য খালি করা হচ্ছে।
অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নও দাবি করেছে, অনেক পরিবারের কাছে জমির নথি রয়েছে, যা বনভূমি ঘোষণার আগে তাদের দেওয়া হয়েছিল। তারা উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর জন্য পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে।
পিজুশ হাজারিকার টুইট এবং গুয়াহাটি হাইকোর্টের রায় অসমে বনভূমি দখল নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও উত্তপ্ত করেছে। এই অভিযান একদিকে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে, অন্যদিকে এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
গুয়াহাটির জালুকবাড়ি এলাকায় ৩০০টিরও বেশি পরিবারের উচ্ছেদ স্থগিত করা হয়েছে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত, কারণ আদালত জানতে চেয়েছে এই জমি বনভূমি নাকি রাজস্ব জমি। এই ঘটনা অসমের পরিবেশ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
ডেঙ্গুতে রাজ্যে শীর্ষে মুর্শিদাবাদ, লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা
মন্ত্রী হাজারিকা এবং মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বারবার বলেছেন, অসমের বনভূমি ও সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার জন্য এই অভিযান চলবে। আদালতের নির্দেশে বেড়া দেওয়া, চেক-গেট স্থাপন এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে, বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা এবং স্থানীয়দের প্রতিবাদ এই অভিযানকে আরও জটিল করে তুলেছে। সামনের দিনে এই ঘটনা কীভাবে অগ্রসর হবে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে।