২০১৩ সালে সারদা চিটফান্ড কাণ্ডে (Saradha Scam) গ্রেফতার হয়েছিলেন সারদা গ্রুপের কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং তাঁর সহকর্মী দেবযানী মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ ১২ বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে ২০২৫ সালে সেই বহুল আলোচিত মামলার প্রথম রায়দান হল। মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে তিনটি মামলায় (Saradha Scam) বেকসুর খালাস হলেন সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী। ফলে এই দুই অভিযুক্তের জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক বড় স্বস্তির খবর। তবে একইসঙ্গে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সারদা কাণ্ডের (Saradha Scam) ইতিহাস বলতে গেলে এক সময় গোটা রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১৩ সালে হঠাৎ করে সারদা গ্রুপের ব্যবসা ভেঙে পড়লে হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মুহূর্তে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। গ্রামাঞ্চল থেকে শহর—সর্বত্র অসংখ্য মানুষ এই সংস্থায় টাকা জমিয়েছিলেন দ্রুত লাভের আশায়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো সেই টাকা ফেরত পাননি তাঁরা। ফলে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে সংস্থার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পরই গ্রেফতার হন সারদা গ্রুপের প্রধান সুদীপ্ত সেন এবং সংস্থার অন্যতম মুখ দেবযানী মুখোপাধ্যায়।
গ্রেফতারের পর থেকে একাধিক মামলা চলতে থাকে তাঁদের বিরুদ্ধে। বারবার আদালতে(Saradha Scam) হাজিরা দিতে হয়েছে, তদন্ত চলেছে সিবিআই ও ইডি-র তরফে। রাজনৈতিক মহলেও এই মামলার প্রভাব ব্যাপক ছিল। বহু রাজনীতিকের নাম উঠে এসেছিল সারদা মামলার তদন্তে। রাজ্যে শাসক ও বিরোধী—উভয় পক্ষই একে অপরকে আক্রমণ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল এই কেলেঙ্কারিকে। এমনকি সংসদ ও বিধানসভায়ও এই ইস্যু নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল।
অবশেষে ২০২৫ সালে এসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় (Saradha Scam) আদালত জানিয়ে দিল, সুদীপ্ত সেন ও দেবযানীর বিরুদ্ধে প্রমাণ যথেষ্ট নয়। ফলে তাঁরা বেকসুর খালাস। আদালতের এই রায় প্রকাশ্যে আসতেই সুদীপ্ত ও দেবযানীর আইনজীবীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। তাঁদের দাবি, এতদিনে সত্যের জয় হল। দীর্ঘদিন ধরে নির্দোষ হয়েও তাঁরা জেলের অন্ধকারে বন্দি ছিলেন। আজ ন্যায়বিচার মিলল।
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের একাংশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাচ্ছেন, আবার অনেকেই হতাশ। তাঁদের বক্তব্য, এখনও তাঁরা হারানো টাকা ফেরত পাননি। অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে গেলেও তাঁদের ক্ষতিপূরণের কোনও সুরাহা হল না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ এখনও ন্যায়বিচারের আশায় রয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, এত বড় কেলেঙ্কারির দায় কেউ নিচ্ছে না। সরকার ও তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে শাসক শিবিরের বক্তব্য, আদালতের রায়ই প্রমাণ করে দিচ্ছে, আইনের চোখে তাঁরা নির্দোষ। রাজনৈতিক কারণে তাঁদের নাম বারবার টানা হয়েছিল।
এই রায়ের পর সারদা মামলার (Saradha Scam) অন্যান্য অমীমাংসিত মামলাগুলির ভবিষ্যৎ নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। এখনও বহু মামলা ঝুলে আছে আদালতে। ফলে এই খালাসের রায় কি অন্য মামলাগুলির ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
যা-ই হোক, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা টানাপোড়েন, জেলযাত্রা, আদালত যাওয়া-আসার পর সুদীপ্ত সেন ও দেবযানীর কাছে এটি নিঃসন্দেহে স্বস্তির দিন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সারদা কাণ্ডের ক্ষত আজও অমোচনীয়। আদালতের রায় তাঁদের হয়তো আইনত মুক্তি দিয়েছে, কিন্তু জনমানসে এই চিটফান্ড কাণ্ডের যে দাগ তৈরি হয়েছে, তা হয়তো এত সহজে মুছে যাওয়ার নয়।