কলকাতার সেক্টর V পশ্চিমবঙ্গের আইটি শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে আসছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত এই আইটি হাব বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ এবং পুনের মতো শহরগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, ২০২৫ সালে এসে প্রশ্ন উঠছে—সেকPCS#েক্টর V কি এখনও প্রতিযোগিতামূলক? এই প্রতিবেদনে আমরা কলকাতার আইটি অবকাঠামোর বর্তমান অবস্থা, সেক্টর V-এর শক্তি, দুর্বলতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা পর্যালোচনা করব।
সেক্টর V-এর আইটি অবকাঠামো: একটি ওভারভিউ
সেক্টর V, সল্টলেকের একটি শিল্প এলাকা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে আইটি শিল্পের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS), কগনিজেন্ট, উইপ্রো, এবং আইবিএম-এর মতো বড় আইটি কোম্পানির অফিস রয়েছে। এছাড়া, ছোট ও মাঝারি স্কেলের স্টার্টআপ এবং টেক কোম্পানিগুলিও এখানে কাজ করে। সেক্টর V-এর আকর্ষণের প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে সাশ্রয়ী অফিস স্পেস, দক্ষ কর্মী, এবং সরকারি সহায়তা। তবে, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি বিশ্বে এই অঞ্চলের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখা কি সম্ভব?
সেক্টর V-এর শক্তি
- সাশ্রয়ী খরচ: সেক্টর V-এর অফিস স্পেস এবং অপারেশনাল খরচ বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ বা গুরুগ্রামের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এটি স্টার্টআপ এবং ছোট কোম্পানিগুলির জন্য আকর্ষণীয়।
- দক্ষ কর্মীবাহিনী: কলকাতার শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের একটি বড় অংশ আইটি সেক্টরে কাজ করে। শহরের বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলি প্রতি বছর হাজার হাজার প্রযুক্তি পেশাদার তৈরি করে।
- সংযোগ: সেক্টর V কলকাতা শহরের কাছাকাছি অবস্থিত এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়। এছাড়া, মেট্রো রেল সংযোগ এই অঞ্চলের অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়িয়েছে।
- সরকারি সমর্থন: পশ্চিমবঙ্গ সরকার আইটি শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা, ভর্তুকি এবং ট্যাক্স সুবিধা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, রাজ্যের আইটি নীতি কোম্পানিগুলিকে অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ খরচে ছাড় দেয়।
সেক্টর V-এর চ্যালেঞ্জ
- অবকাঠামোর ঘাটতি: সেক্টর V-এর আইটি অবকাঠামো বেঙ্গালুরু বা হায়দ্রাবাদের মতো উন্নত নয়। অনেক কোম্পানি অভিযোগ করে যে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সংযোগ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং আধুনিক অফিস স্পেসের অভাব তাদের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে, পুরানো বিল্ডিং এবং অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ একটি বড় সমস্যা।
- প্রতিযোগিতা: বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, এবং নয়ডার মতো শহরগুলি উন্নত অবকাঠামো, বড় বিনিয়োগ এবং বিশ্বব্যাপী সংযোগের কারণে আইটি শিল্পে এগিয়ে রয়েছে। সেক্টর V-এর তুলনায় এই শহরগুলিতে বেশি সংখ্যক বহুজাতিক কোম্পানি এবং উদ্ভাবনী স্টার্টআপ রয়েছে।
- দক্ষতার ঘাটতি: যদিও কলকাতায় শিক্ষিত কর্মীবাহিনী রয়েছে, তবে নতুন প্রযুক্তি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ব্লকচেইন এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অভাব রয়েছে। এই কারণে অনেক কোম্পানি তাদের প্রধান কার্যালয় অন্য শহরে স্থানান্তর করছে।
- ব্র্যান্ড ইমেজ: কলকাতা এখনও অনেকের কাছে একটি ঐতিহ্যবাহী শহর হিসেবে পরিচিত, যা আইটি কোম্পানিগুলির জন্য আকর্ষণীয় ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করতে বাধা দেয়। বেঙ্গালুরু বা হায়দ্রাবাদের মতো শহরগুলি তাদের প্রযুক্তি কেন্দ্রীক ইমেজের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
২০২৫-এ সেক্টর V-এর প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান
২০২৫ সালে সেক্টর V তার সাশ্রয়ী খরচ এবং দক্ষ কর্মীবাহিনীর কারণে ছোট এবং মাঝারি আইটি কোম্পানিগুলির জন্য আকর্ষণীয় রয়েছে। তবে, বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলি প্রায়শই উন্নত অবকাঠামো এবং বৃহত্তর বাজার অ্যাক্সেসের জন্য অন্য শহরগুলিকে বেছে নেয়। ওয়েব তথ্য অনুসারে, ভারতের আইটি শিল্প ২০২৪-২৫ সালে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বাজারে পৌঁছেছে, কিন্তু কলকাতার অংশ এতে তুলনামূলকভাবে কম। সেক্টর V-এর প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গুরুত্বপূর্ণ:
- অবকাঠামো উন্নয়ন: উচ্চ-গতির ইন্টারনেট, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, এবং আধুনিক অফিস স্পেস তৈরির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন আইটি পার্ক এবং ডেটা সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা সেক্টর V-কে শক্তিশালী করতে পারে।
- দক্ষতা উন্নয়ন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার সিকিউরিটি এবং ব্লকচেইনের মতো নতুন প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা উচিত। কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলি এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
- স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম: স্টার্টআপদের জন্য ইনকিউবেটর, অ্যাক্সিলারেটর, এবং ফান্ডিং সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। বেঙ্গালুরুর স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সেক্টর V-এ উদ্ভাবন কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে।
- ব্র্যান্ডিং এবং প্রচার: কলকাতাকে একটি আধুনিক আইটি হাব হিসেবে প্রচার করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতো প্ল্যাটফর্মে কলকাতার প্রযুক্তি সম্ভাবনা তুলে ধরা যেতে পারে।
- পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP): সরকার এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যেতে পারে।
সেক্টর V-এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
২০২৫ সালে সেক্টর V তার সাশ্রয়ী খরচ এবং শিক্ষিত কর্মীবাহিনীর সুবিধা নিয়ে এখনও আইটি শিল্পে প্রাসঙ্গিক রয়েছে। তবে, বেঙ্গালুরু বা হায়দ্রাবাদের মতো শহরগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গেলে অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং ব্র্যান্ডিংয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন আইটি পার্ক প্রকল্প, যেমন নিউ টাউনের সিলিকন ভ্যালি প্রকল্প, সেক্টর V-এর প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে। এছাড়া, কলকাতার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং জীবনযাত্রার কম খরচ এই অঞ্চলকে আইটি পেশাদারদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
সেক্টর V কলকাতার আইটি শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে এটি বেঙ্গালুরু বা হায়দ্রাবাদের মতো শহরগুলির সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষতা প্রশিক্ষণ, এবং কৌশলগত ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে সেক্টর V তার প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে এবং উন্নতি করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার, আইটি কোম্পানি এবং স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টা সেক্টর V-কে ভারতের আইটি মানচিত্রে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। কলকাতার আইটি অবকাঠামোর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে, যদি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।