আজ সপ্তাহের প্রথম কর্মব্যস্ত দিনে নবান্নে বসতে চলেছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক (West Bengal Cabinet Meeting)। বিকেল ৪টের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হবে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই জল্পনা তুঙ্গে— মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই ফের মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার পিছনে বড় কোনও সিদ্ধান্ত লুকিয়ে রয়েছে কি না। গত ১২ অগাস্ট রাজ্যের মুখ্যসচিবের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই বৈঠকের কথা জানানো হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এদিনের মন্ত্রিসভার আলোচনায় মূলত দু’টি বিষয় সামনে আসতে পারে। প্রথমত, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (SIR) ইস্যু এবং দ্বিতীয়ত, বাংলা ভাষা নিয়ে তৈরি হওয়া আন্দোলন ও উত্তেজনা। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটার তালিকা পর্যালোচনার জন্য বিশেষ সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্তে রাজ্য প্রশ্ন তুলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার সমান। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আজকের বৈঠকে এই ইস্যুতে সরকার কড়া অবস্থান নিতে পারে।
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাঙালি শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, বাংলা ভাষায় কথা বললেই শ্রমিকরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। বিশেষত, দিল্লি, গুজরাট, আসাম ও ত্রিপুরার মতো রাজ্যে কর্মরত বাংলার শ্রমিকদের নিয়ে এই ধরনের ঘটনা বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু তাই নয়, ভাষার কারণে বৈষম্যের অভিযোগে সোচ্চার হয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও। স্বাভাবিকভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিষয়ে বড় কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে পারেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বাংলা ভাষা আন্দোলনের আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকার আগামী দিনে আরও বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতেও পারে। সূত্রের খবর, বাংলার মানুষ যাতে অন্য রাজ্যে কর্মসূত্রে গেলে নিরাপদ থাকে এবং মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারে বৈষম্যের শিকার না হন, সেই বিষয়ে বিশেষ প্রস্তাব আসতে পারে। পাশাপাশি, রাজ্যে বাংলা ভাষাকে আরও শক্তিশালী করতে শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু নয়া উদ্যোগের ঘোষণাও হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে দ্বিমুখী চাপের মধ্যে রয়েছেন। একদিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাত, অন্যদিকে জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র রাজনৈতিক লড়াই। সেই প্রেক্ষাপটে রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠককে কেন্দ্র করে আজ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন দিক নির্দেশ আসতে চলেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া না হলেও শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি— “মানুষের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীই বড় পদক্ষেপ করবেন।”
আজকের বৈঠকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও পরিবহণ খাতের বিভিন্ন নীতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি এখন একেবারে স্থির— SIR ইস্যু এবং ভাষা আন্দোলন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে কী ঘোষণা করেন।
সব মিলিয়ে, আজ বিকেল ৪টের মন্ত্রিসভার বৈঠক রাজ্যবাসীর নজরে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত কি নতুন রাজনৈতিক বার্তা দেবে, নাকি প্রশাসনিক পদক্ষেপেই সীমাবদ্ধ থাকবে— সেটাই এখন দেখার বিষয়।