আজ, সোমবার সংসদ ভবনে কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের (Mallikarjun kharge) দফতরে অনুষ্ঠিত হল ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটের মধ্যে ঐক্য জোরদার করা এবং কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত কণ্ঠস্বর গড়ে তোলাই এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। বিশেষত SIR (Special Investigation Report) নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যে চাপানউতোর চলছে, সেই বিষয়েই আজকের আলোচনায় জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, আরজেডি, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী), জেডিইউ সহ একাধিক বিরোধী দলের সাংসদ ও শীর্ষ নেতারা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরাও এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের রূপরেখা তৈরি করার পাশাপাশি SIR ইস্যুতে সংসদে কীভাবে কৌশল নেওয়া হবে, তা নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তৃণমূলের এক সাংসদ বৈঠকে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের বৈঠকে বিরোধীরা একত্রে আলোচনা করবে। কেন্দ্রীয় সরকার জনমতকে তোয়াক্কা না করে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব সংসদে এবং সংসদের বাইরে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্ডিয়া জোটের এই বৈঠক বিরোধী ঐক্যের একটি বড় পরীক্ষা। কারণ সংসদে একসঙ্গে দাঁড়াতে গেলেও বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের স্বার্থ ও কৌশল ভিন্ন। একাধিক রাজ্যে দলগুলির মধ্যে সমীকরণ জটিল। তবুও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপিকে টেক্কা দিতে হলে জোটের মধ্যে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
SIR ইস্যু ছাড়াও, সংসদে বিভিন্ন সরকারি বিলে বিরোধীরা যৌথ অবস্থান নেবে কি না, সেটিও আজকের বৈঠকের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে আন্দোলন কীভাবে জোরদার করা যায়, তার পরিকল্পনাও এই বৈঠকের অন্যতম এজেন্ডা। কংগ্রেস সূত্রের খবর, মল্লিকার্জুন খাড়্গে নিজে বৈঠকের সভাপতিত্ব করছেন এবং তিনি সমস্ত বিরোধী দলকে ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূলের উপস্থিতি রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। গত কয়েক মাস ধরে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে নানা ইস্যুতে মতভেদ দেখা দিলেও সংসদে বিরোধী ঐক্য বজায় রাখতে তৃণমূলও এগিয়ে এসেছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধীদের একত্র হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আজকের বৈঠক ঘিরে সংসদ ভবনের করিডরে তীব্র রাজনৈতিক হাওয়া। একদিকে বিজেপি দাবি করছে, বিরোধীরা শুধুমাত্র বিজেপি-বিরোধিতার রাজনীতি করছে, জনগণের স্বার্থে কোনও বিকল্প রূপরেখা তাদের হাতে নেই। অন্যদিকে বিরোধী শিবির জবাব দিয়েছে, “দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান এবং মানুষের অধিকার রক্ষার জন্যই ইন্ডিয়া জোটের এই উদ্যোগ।”
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আজকের বৈঠকের গুরুত্ব অনেকটাই প্রতীকী। কারণ শুধুমাত্র একদিনের বৈঠকে বিরোধীদের মধ্যে সমস্ত মতভেদ দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও যদি বিরোধীরা একমত হয়ে সংসদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হতে পারে, তাহলে আগামী দিনে বিজেপির উপর চাপ বাড়বে।
লোকসভা ভোটের আর হাতে বেশি সময় নেই। বিরোধীরা জানে, সময় যত এগোবে, ততই ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। তাই সংসদে মল্লিকার্জুন খাড়্গের দফতরে বসা আজকের এই বৈঠক বিরোধী রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিশা নির্ধারণে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত।