ভারতে অটোমোবাইল খাতে বড়সড় সংস্কার আসতে চলেছে। কেন্দ্র সরকার প্রস্তাব দিয়েছে যে, গাড়ির জিএসটি কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হবে যাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা শ্রেণিবিভাগ সংক্রান্ত জটিলতা দূর হয়। বর্তমানে গাড়ির কর নির্ধারণে ইঞ্জিনের ক্ষমতা ও গাড়ির দৈর্ঘ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে ছোট গাড়ি, সেডান বা এসইউভি — সমস্ত মডেলের উপর আলাদা আলাদা হারে কর চাপানো হয়। কিন্তু নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই জটিলতা দূর হয়ে একটি একক কাঠামোতে কর ধার্য হবে।
বর্তমানে জিএসটি-র বোঝা
ভারতে এখন গাড়ির উপর জিএসটি ২৮ শতাংশ হারে ধার্য হয়, যা সর্বোচ্চ স্ল্যাব। এর উপরে আবার গাড়ির ধরন অনুযায়ী এক থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ সেস বসানো হয়। এর ফলে ছোট পেট্রোল গাড়ির উপর যেখানে প্রায় ২৯ শতাংশ কর পড়ে, সেখানে SUV-এর মতো বড় গাড়ির ক্ষেত্রে মোট করের হার দাঁড়ায় প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ পড়ে। কেবলমাত্র বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য এই হার অনেকটাই কম, মাত্র ৫ শতাংশ।
এমাসেই শুরু হচ্ছে মারুতি সুজুকি’র প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন, কেমন হবে
নতুন প্রস্তাবিত কর কাঠামো
পিটিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, কেন্দ্র সরকার এখন জিএসটি কাঠামোকে একটি দুই-স্তরবিশিষ্ট কর ব্যবস্থায় নিয়ে যেতে চাইছে। এতে থাকবে ৫ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশের স্ল্যাব। কয়েকটি নির্বাচিত পণ্যের জন্য ৪০ শতাংশের একটি আলাদা স্ল্যাব রাখা হবে। এই কাঠামোতে গাড়িকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে আর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি বা দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে আলাদা কর ধার্য করার প্রয়োজন না পড়ে। প্রস্তাবিত নতুন হারে ছোট হ্যাচব্যাক গাড়ির উপর কর নেমে আসতে পারে বর্তমান ২৮ শতাংশ থেকে মাত্র ১৮ শতাংশে।
যদি এই সংস্কার কার্যকর হয়, তবে গাড়ি আরও সাশ্রয়ী হবে এবং স্বাভাবিকভাবেই বিক্রি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের যাত্রীবাহী গাড়ির বাজারে এতদিন ছোট গাড়ি ছিল মূল চালিকাশক্তি। করের হার কমলে সেই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হবে। এতে গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি অটোমোবাইল শিল্পেও নতুন চাঙ্গাভাব আসবে। কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য হলো খরচ বৃদ্ধি করে অর্থনীতিকে গতিশীল করা, যা এই জিএসটি সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভব হতে পারে।
প্রস্তাবটি নিয়ে আগামী ২১ আগস্ট জিএসটি রেট র্যাশনালাইজেশন বিষয়ে গঠিত মন্ত্রিগোষ্ঠীর (GoM) বৈঠকে আলোচনা হবে। তার পরবর্তী ধাপে সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা মিলে গঠিত জিএসটি কাউন্সিল এই কাঠামো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। যদি এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, তবে ভারতের কর কাঠামোয় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, যা অটোমোবাইল বাজারকে নতুন দিশা দেখাতে পারে।