মমতার কায়দায় দুঃস্থদের মন জয়ের চেষ্টা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর

স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চকে হাতিয়ার করে দুঃস্থ ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা (Delhi CM Rekha Gupta)। ১৫ আগস্ট ২০২৫…

Delhi CM Rekha Gupta Unveils Atal Canteen and Housing Schemes to Empower the Poor

স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চকে হাতিয়ার করে দুঃস্থ ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা (Delhi CM Rekha Gupta)। ১৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে লালকেল্লা থেকে দেওয়া তাঁর বার্তায় উঠে এল এক নতুন সামাজিক উদ্যোগ— ‘অটল ক্যান্টিন’ প্রকল্প। ঘোষণার পরই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা, কারণ অনেকেই বলছেন— এ যেন হুবহু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মা কিচেন’ প্রকল্পের ছায়া।

অটল ক্যান্টিন: শ্রমিকদের জন্য ৫ টাকার খাবার
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় জানানো হয়, সেপ্টেম্বর থেকেই দিল্লির বিভিন্ন শ্রমঘন এলাকায় মোট ৫০টি ক্যান্টিন চালু হবে, যেখানে শ্রমিক ও গরিব মানুষ ৫ টাকার বিনিময়ে ভাত, ডাল, তরকারি এবং মাঝে মধ্যে ডিম বা মাছের ঝোল খেতে পাবেন। এই উদ্যোগ অনেকটা ওডিশার ‘আহার কেন্দ্র’ কিংবা তামিলনাড়ুর ‘আম্মা উনাভাগম’-এর মতো, যেগুলি বহু বছর ধরেই নিম্ন আয়ের মানুষকে পুষ্টিকর খাবার জোগাচ্ছে।

   

জাতীয় পুষ্টি গবেষণা সংস্থা (National Institute of Nutrition, 2020) এক সমীক্ষায় জানিয়েছিল, এ ধরনের ভর্তুকিযুক্ত ক্যান্টিন ব্যবস্থার ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের পুষ্টি গ্রহণ ক্ষমতা অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে। রেখা গুপ্তা তাই দাবি করেন, তাঁর উদ্যোগও দুঃস্থ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।

বাস্তুহারা পরিবারের জন্য নতুন আশা
খাবারের পাশাপাশি আবাসনের ক্ষেত্রেও বড় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লি আরবান শেল্টার ইমপ্রুভমেন্ট বোর্ড (DUSIB)-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দিল্লিতে প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষ বস্তিতে বসবাস করেন। তাঁদের জন্য ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ হাজার পরিবারকে পাকা ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রেখা গুপ্তা। এই প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণা দিল্লির দীর্ঘদিনের আবাসন সংকট মোকাবিলায় এক সাহসী পদক্ষেপ। এত দিন ধরে শহরের ঝুপড়ি ও বস্তি সংস্কার নিয়ে একাধিক সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে খুব কম উন্নতি হয়েছে। রেখা গুপ্তা তাই দাবি করেছেন— “এই প্রকল্পে তথ্যভিত্তিক ও স্বচ্ছ নীতি নেওয়া হয়েছে। এবার আর দুঃস্থ মানুষের প্রতি নগর অবহেলার অভিযোগ উঠবে না।”

আর্থিক বোঝার প্রশ্ন
তবে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। দিল্লির বার্ষিক বাজেট প্রায় ৭৬,০০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্যান্টিন ও আবাসন প্রকল্পে বিপুল অঙ্ক বরাদ্দ করলে অন্য খাতে চাপ বাড়তে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ভর্তুকি নির্ভর এই প্রকল্পগুলি দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। এমনকি কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এর ফলে অতীতে হওয়া ২০১৭ সালের কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতির মতো অপব্যবহার আবারও দেখা দিতে পারে।

বিজেপি শিবিরের এক নেতার মন্তব্য— “প্রকল্প ভাল, কিন্তু তহবিলের স্বচ্ছতা কোথায়? দিল্লি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ঘাটতির মুখে। এর সঙ্গে আবার ক্যান্টিন চালানো হলে শেষমেষ করদাতার টাকাই নষ্ট হবে।”

Advertisements

মমতার ‘মা কিচেন’-এর সঙ্গে তুলনা
২০২১ সালে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মা প্রকল্প’-এর সূচনা করেছিলেন। কলকাতার ১৬টি বরোর ১৪৪টি ওয়ার্ডে ওই সময় থেকে চালু হয় ৫ টাকার বিনিময়ে ভাত-ডাল-সবজি-ডিমের ব্যবস্থা। প্রতিদিন দুপুরে অন্তত ৫০০ মানুষ সেখানে খাবার পান। মমতার এই উদ্যোগ শহরজুড়ে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছিল এবং আজও দুঃস্থ মানুষের ভরসা হয়ে আছে।

রাজনৈতিক মহলে তাই প্রশ্ন উঠছে— রেখা গুপ্তার ‘অটল ক্যান্টিন’ কি মমতার প্রকল্পের অনুকরণ নয়? যদিও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলছেন— “আমরা কারও পথ অনুসরণ করছি না। মানুষের প্রয়োজন থেকে এই উদ্যোগ এসেছে। দেশের যেকোনও সফল প্রকল্প আমাদের অনুপ্রেরণা।”

দুঃস্থদের মন জয় নাকি রাজনৈতিক চাল?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৭ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই প্রকল্পে জোর দিয়েছেন রেখা গুপ্তা। কারণ ভোটের অঙ্ক কষলে দেখা যায়, বস্তি ও নিম্নবিত্ত মানুষই দিল্লির রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে তোলেন।

তবে সাধারণ মানুষের কাছে এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে এক নতুন আশার আলো। এক ঝুপড়িবাসীর কথায়— “ভাত খেতে গেলে এখন ৫০ টাকা খরচ হয়। যদি সত্যিই ৫ টাকায় ভাত-ডাল পাওয়া যায়, তাহলে আমরা অনেকটা বাঁচব।”

রেখা গুপ্তার নতুন উদ্যোগ এখন দিল্লি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। বিরোধীরা একে রাজনৈতিক কৌশল বলে কটাক্ষ করলেও সাধারণ শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ আপাতত আশাবাদী। আগামী দিনে প্রকল্পগুলি কতটা কার্যকরী হয়, তা-ই এখন দেখার। তবে এটুকু স্পষ্ট— মমতার কায়দায় ‘অটল ক্যান্টিন’ ও আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে দিল্লি সরকার দুঃস্থদের মন জয় করার বড়সড় চেষ্টা শুরু করেছে।