পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে আরও একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের জনপ্রিয় পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েল (Indian Oil)। সম্প্রতি তাদের পানিপত রিফাইনারিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ISCC CORSIA সার্টিফিকেশন লাভ করেছে, যার মাধ্যমে ব্যবহৃত রান্নার তেল থেকে স্থিতিশীল বিমান জ্বালানি (Sustainable Aviation Fuel বা SAF) উৎপাদনের পথ খোলা হয়েছে। এই উদ্যোগটি ভারতের বিমান চলাচল ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব সমাধান প্রদানের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
রান্নার তেল থেকে বিমান জ্বালানি: কীভাবে সম্ভব?
বাড়ির রান্না বা রেস্টুরেন্টে ব্যবহৃত তেল, যা সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়, এখন থেকে বিমানের ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ইন্ডিয়ান অয়েলের পানিপত রিফাইনারিতে ব্যবহৃত হাইড্রোপ্রোসেসিং প্রযুক্তি দিয়ে এই তেলগুলোকে বিমান-চালিত জ্বালানিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত তেলকে পরিশোধন করে এমন একটি জ্বালানি তৈরি করা হয়, যা বিদ্যমান বিমান ইঞ্জিনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের মতে, এই SAF-এর জীবনচক্রে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন সাধারণ জেট জ্বালানির তুলনায় ৮০% পর্যন্ত কম, যা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কতটা বড় এই উদ্যোগ?
ইন্ডিয়ান অয়েলের এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য একটি বড় কৃষ্টি, কারণ দেশে প্রতি বছর প্রায় ২২ লক্ষ টন ব্যবহৃত রান্নার তেল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয় বা রপ্তানি করা হয়। এই তেলগুলো সংগ্রহ করে SAF তৈরির মাধ্যমে ইন্ডিয়ান অয়েল প্রতি বছর ৩৫,০০০ টন SAF উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে, যা ২০২৫ সালের শেষের মধ্যে শুরু হবে। এটি ভারত সরকারের ২০২৭ সালের পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে ১% SAF মিশ্রণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
এই উদ্যোগের সাফল্যের জন্য ব্যবহৃত তেল সংগ্রহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বড় রেস্টুরেন্ট, হোটেল শৃঙ্খলা এবং খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্র থেকে তেল সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও, ছোট দোকান বা গৃহস্থালি থেকে এর সংগ্রহ জটিল। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই ব্যবস্থা সফল হয়, তবে এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে একটি বিপ্লব আনতে পারে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে এই খবরটি ব্যাপক আলোচনা পেয়েছে। অনেকে এটিকে উদ্ভাবনী ধাপ হিসেবে প্রশংসা করছেন, যেমন একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এবার পাকোড়ার তেল থেকে বিমান উড়বে, এটা সত্যি গর্বের বিষয়!” তবে কিছু ব্যক্তি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং জানতে চাইছেন, “কিভাবে নিশ্চিত হবে যে এই জ্বালানি ইঞ্জিনের ক্ষতি করবে না?” ইন্ডিয়ান অয়েল জানিয়েছে, তাদের SAF-এর গুণমান আন্তর্জাতিক মান (ASTM স্ট্যান্ডার্ড) অনুযায়ী পরীক্ষিত এবং নিরাপদ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইন্ডিয়ান অয়েলের লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে SAF উৎপাদন ক্ষমতা ৩০,০০০ টন পর্যন্ত বাড়ানো। এর পাশাপাশি তারা হাইড্রোজেন জ্বালানি এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উপর গবেষণা চালাচ্ছে। ভারতকে বিশ্বের নবম বৃহত্তম বিমান বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হলে, এই উদ্যোগটি দেশের অর্থনীতি এবং পরিবেশ উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
“রান্নার তেলেই উড়বে বিমান” এই কথাটি এখন আর কল্পনা নয়, বরং বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে। ইন্ডিয়ান অয়েলের এই উদ্ভাবনী পদক্ষেপ ভারতকে পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যায়, এই উদ্যোগ সফল হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশও এই মডেল অনুসরণ করতে পারে।