বহুল বিক্রিত একগুচ্ছ পণ্যে ৪০ শতাংশ GST চাপাচ্ছে মোদী সরকার

চারদিকে পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকান। রোজ কোটি কোটি টাকার বিক্রি। হাজার হাজার মানুষের রুটিরুজি। এমনই একগুচ্ছ বহুল বিক্রিত পণ্যের উপর বিপুল কর (GST) চাপাতে চলেছে…

Modi Government Imposes GST

চারদিকে পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকান। রোজ কোটি কোটি টাকার বিক্রি। হাজার হাজার মানুষের রুটিরুজি। এমনই একগুচ্ছ বহুল বিক্রিত পণ্যের উপর বিপুল কর (GST) চাপাতে চলেছে কেন্দ্র।

মোদী সরকার একটি বড় আর্থিক সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে, যা দেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের পরিকল্পনা হলো “সিন গুডস” বা সামাজিকভাবে ক্ষতিকর মনে করা পণ্যগুলোর উপর ৪০ শতাংশের জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) আরোপ করা। এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে তামাক, পান মশলা, সিগারেট এবং জুয়া সংক্রান্ত কার্যক্রম। এই নতুন কর প্রণোদনা নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, যেখানে একদল মনে করছে এটি স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, অন্যদিকে অনেকে এর ব্যবসায়িক ও সমাজগত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।

   

নতুন GST কাঠামোর পটভূমি
সরকারের এই পদক্ষেপটি GST ২.০-এর অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যার লক্ষ্য অর্থনৈতিক সরলীকরণ এবং জনজীবনের সুবিধার জন্য করের হার কমানো। সূত্রের মতে, বর্তমানে ১২% এবং ২৮% এই দুটি স্ল্যাব বাতিল করে শুধুমাত্র ৫% এবং ১৮% স্ল্যাব রাখা হবে, এবং ক্ষতিকর পণ্যগুলোর জন্য একটি উচ্চ “সিন রেট” হিসেবে ৪০% জিএসটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার তামাকজাত পণ্য ও জুয়ার মতো ক্ষতিকর অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়, যা ভারতীয় সমাজে দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক প্রভাব
তামাক ও পান মশলার ব্যবহার ভারতের জনগণের স্বাস্থ্যে গভীর ক্ষতি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে প্রতি বছর তামাকজাত পণ্যের কারণে প্রায় ১৩.৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। এই পণ্যগুলো মুখের ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ এবং হৃদরোগের মতো জটিল অসুখের মূল কারণ। সরকারের এই ৪০% জিএসটি চাপিয়ে দাম বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তামাকের ব্যবহার কমানো এবং সেই রাজস্ব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে, এই উচ্চ করের মাধ্যমে সরকার প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে পারবে, যা দেশের অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে। তবে, এর পাশাপাশি তামাক শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যেখানে ছোট ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রে চাকরি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।

Advertisements

সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই নতুন কর প্রণোদনার বিরুদ্ধে এবং পক্ষে বিভিন্ন মতামত শোনা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ব্যবহারকারী মনে করছেন যে ৪০% জিএসটি পর্যাপ্ত নয়, এটি ৮০% বা ১০০% হওয়া উচিত, যাতে এই পণ্যগুলোর ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে বলছেন, “যদি কেউ নিজেকে ধ্বংস করতে চায়, তাহলে সরকারকে প্রথমে পয়সা দিতে হবে।” অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি মনে করছেন যে নেশাগ্রস্ত মানুষ এই দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও এই পণ্য কিনবেই, তাই এই কর বৃদ্ধি তাদের অভ্যাসে বড় পরিবর্তন আনবে না।

পান মশলার অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে পাবলিক স্থানগুলো মলিন হওয়ার ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। অনেকে দাবি করছেন যে পান মশলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত, কারণ এটি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না, বরং সমাজের পরিচ্ছন্নতার জন্যও হানিকর।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
এই নতুন জিএসটি নীতি বাস্তবায়নের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রথমত, তামাক শিল্পে নির্ভরশীল শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও বিকল্প চাকরির ব্যবস্থা করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, কালো বাজারের সম্ভাবনা বাড়তে পারে, যেখানে সস্তা তামাক পণ্য অবৈধভাবে বিক্রি হতে পারে। তৃতীয়ত, সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে এই অতিরিক্ত করের রাজস্ব সত্যিই স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে, নতুবা জনগণের আস্থা হারানোর ঝুঁকি থাকবে।

সামগ্রিকভাবে, মোদী সরকারের এই ৪০% জিএসটি চাপানোর পদক্ষেপটি একটি দ্বৈত প্রভাব ফেলতে পারে—একদিকে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি এবং রাজস্ব সংগ্রহ, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে এই নীতির সফলতা নির্ভর করবে এর বাস্তবায়নের দক্ষতা ও জনগণের সমর্থনের উপর। এই বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে আরও স্পষ্টতা ও পরিকল্পনা প্রকাশ করা জরুরি, যাতে এই পদক্ষেপটি সত্যিই দেশের কল্যাণে কাজ করে।