আসন্ন বৈঠকগুলিই নির্ধারণ করবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ঘোষিত বড় কর-সংস্কারের বাস্তবায়ন। সেই সংস্কারগুলোকে সরকার ‘দীপাবলির উপহার’ হিসেবে সামনে আনতে চাইছে। অক্টোবরের ২০ তারিখে উৎসবের আগে নতুন কাঠামো কার্যকর করার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) সংক্রান্ত হার যুক্তিকরণ এবং ব্যবসায়ীদের জন্য কর-জটিলতা কমানোর লক্ষ্যে যে গোষ্ঠী মন্ত্রিসভা (GoM) গঠন করা হয়েছে, তারা ২০ এবং ২১ আগস্ট দুই দিন ধরে বৈঠক করবেন। সেখানে চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করে জিএসটি কাউন্সিলের কাছে পাঠানো হবে।
এই মন্ত্রিগোষ্ঠীর আলোচনার মূল বিষয় হবে— করের হার একীকরণ, প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দ্রুত রেজিস্ট্রেশন এবং স্বয়ংক্রিয় রিফান্ড। ইতিমধ্যেই একটি বিস্তারিত প্রস্তাবপত্র সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, “গোষ্ঠী মন্ত্রিসভা প্রস্তাবগুলিকে খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করবে। সেটিই যাবে জিএসটি কাউন্সিলের টেবিলে।”
জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার কথা সেপ্টেম্বরে তৃতীয় অথবা চতুর্থ সপ্তাহে। এই বৈঠকই হবে কাউন্সিলের ৫৬তম অধিবেশন, যেখানে সভাপতিত্ব করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।
অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, আলোচ্য সংস্কারের ব্যাপ্তি এতটাই বড় যে একাধিক দিন ধরে বৈঠক চালাতে হতে পারে। এক কর্মকর্তা জানান, “গোটা কাঠামো নিয়ে ব্যাপক সংস্কার হচ্ছে। তাই একদিনে সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নাও হতে পারে। দু’দিন ধরে কাউন্সিল বসতে পারে।”
জিএসটি সংস্কারের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল প্রায় আড়াই বছর আগে। কিন্তু মাঝে মাঝে বিলম্ব হয়েছে। একদিকে কর্ণাটকে নতুন সরকার গঠনের পর গোষ্ঠী মন্ত্রিসভার গঠন পরিবর্তন হয়, অন্যদিকে অন্যান্য প্রশাসনিক জটিলতাও অগ্রগতি আটকে দেয়।
তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কেন্দ্র আশা করছে, রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত একমত হওয়া সম্ভব হবে। স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন— কর ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও সাধারণ মানুষের জন্য সহজ করা হবে। তাই রাজনৈতিক সদিচ্ছার সঙ্গে এখন প্রশাসনিক গতি মিলবে বলেই বিশ্বাস করা হচ্ছে।
জিএসটি সংস্কারের আলোচনায় একটি বড় প্রস্তাব সামনে এসেছে— স্বাস্থ্য বিমা ও জীবন বিমার ওপর বর্তমানে যে ১৮% কর ধার্য রয়েছে, তা কমানো হতে পারে। শিল্প মহল এবং বীমা কোম্পানিগুলি বহুদিন ধরেই এই দাবি জানাচ্ছিল। এবার সেই আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
কর হ্রাস হলে সাধারণ গ্রাহকরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই বিমা খাতের প্রসারও ত্বরান্বিত হবে। সরকারও মনে করছে, সামাজিক সুরক্ষা প্রসারের জন্য বিমা খাতে কর-ভার হ্রাস করা দরকার।
ভারতে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে জিএসটি চালু হয়েছিল। সেই সময় কাঠামোটি অনেকটাই পূর্বতন কর-ব্যবস্থার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আট বছরের অভিজ্ঞতায় নানা সমস্যা ও সুযোগ সামনে এসেছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ভাষায়, “২০১৭ সালে যা কার্যকর হয়েছিল, তা ছিল পুরনো কাঠামোর ধারাবাহিকতা। গত আট বছরে আমরা বহু শিক্ষা নিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবার সম্পূর্ণ নতুন এক টেমপ্লেট তৈরি করা হয়েছে।”
এই নতুন কাঠামো কার্যকর হলে এটিই হবে জিএসটি-র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংস্কার। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাধারণ গ্রাহক এবং রাজ্য সরকারের আর্থিক কাঠামো— তিন ক্ষেত্রেই এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
কেন্দ্রীয় সরকারের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা অনুযায়ী, সংস্কার কার্যকর করা হবে দীপাবলির ঠিক আগে। অক্টোবরের ২০ তারিখ উৎসবের আগে যাতে জনগণের হাতে বাড়তি সুবিধা পৌঁছায়, সেই লক্ষ্যেই এই সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে।
সরকার মনে করছে, উৎসবের মরশুমে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা থাকে। সেই সময় যদি জিএসটি সহজীকরণ কার্যকর হয়, তবে খরচের প্রবাহ বাড়বে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একইসঙ্গে সাধারণ ভোটারদের কাছেও সরকারের উদ্যোগ পৌঁছাবে ‘উপহার’ হিসেবে।
সব মিলিয়ে আগস্টের গোষ্ঠী মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং সেপ্টেম্বরে জিএসটি কাউন্সিলের অধিবেশন— দুটি বৈঠক এখন দেশের আর্থিক সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ঘোষিত সংস্কারের দিশা এই বৈঠকগুলোতেই স্থির হবে।
অবশেষে যদি সংস্কারগুলি কার্যকর হয়, তবে আট বছরের জিএসটি যাত্রার সবচেয়ে বড় মাইলফলক হতে চলেছে এ বছর। ব্যবসা জগৎ, রাজ্য সরকার এবং সাধারণ মানুষ— সবারই এখন নজর সেই বৈঠকের দিকে।