বাংলা চলচ্চিত্র জগতে কাকাবাবুর নাম উচ্চারিত হলেই দর্শকদের মনে জাগে এক বিশেষ উত্তেজনা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে জন্ম নেওয়া এই চরিত্র একাধারে দুঃসাহসী, বুদ্ধিমান এবং কৌতূহলী। তাঁর অভিযানের ভুবন কেবল কিশোর-কিশোরীদেরই নয়, বড়দের কাছেও সমানভাবে জনপ্রিয়। বড়পর্দায় এই চরিত্রকে প্রথম জীবন্ত করে তুলেছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ‘মিশর রহস্য’, ‘ইয়েতি অভিযান’ থেকে শুরু করে ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’— তিনটি ছবিতেই কাকাবাবুর উপস্থিতি ছিল জমজমাট। তবে কেনিয়ার জঙ্গলের দুঃসাহসিক অভিযানের পর প্রায় তিন বছর ধরে আর নতুন কাকাবাবু ছবি পরিচালনা করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
২০১৩ থেকে ২০২০— প্রায় সাত বছর ধরে কাকাবাবু নিয়ে কাজ করেছিলেন সৃজিত। সেই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘কাকাবাবু ট্রিলজির এখানেই ইতি। শিশুদের জন্য বানানো ছবির নিরিখে কাকাবাবু আমার কাছে একেবারেই স্পেশ্যাল।’’ তাঁর কথাতেই বোঝা গিয়েছিল, অন্তত কিছুদিনের জন্য এই সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। এর মাঝেই ‘বিজয়নগরের হিরে’ অবলম্বনে চন্দ্রাশিস রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন কাকাবাবু ছবির পরিচালনার। চলতি বছরেই মুক্তি পেতে চলেছে সেই ছবি, আর দর্শক আবারও বড়পর্দায় ফিরে পাবেন তাঁদের প্রিয় নায়ককে।
কিন্তু এর মধ্যেই টলিপাড়ায় ফের শোরগোল। সৃজিত মুখোপাধ্যায় হঠাৎই সমাজমাধ্যমে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি
সোফায় বসে আছেন তিনি খানিক বিমর্ষ ভঙ্গিতে। হাতে ধরা একটি চিত্রনাট্যের ফাইল। সেই ফাইলের প্রচ্ছদে স্পষ্ট লেখা— ছবির নাম ‘উল্কা রহস্য’। আর তার নিচেই বড় হরফে লেখা ‘পরিচালনায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়’। মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় এই ছবি।
যারা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজ পড়েছেন, তাঁরা জানেন ‘উল্কা রহস্য’ কতটা জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। অসমের গভীর জঙ্গলে জটিংগা পাখির সন্ধান, বৈজ্ঞানিক অপহরণের নাটক, আর গোপালপুরের সমুদ্র সৈকতে উল্কাখণ্ডের খোঁজ— সব মিলিয়েই এই কাহিনি একেবারে টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। পাঠকের কাছে এটি যেমন রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা, তেমনি পরিচালক হিসেবে বড়পর্দায় রূপ দিতে গেলে প্রয়োজন হবে বিশাল মাপের প্রযোজনা ও প্রযুক্তির।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পোস্ট করা এই ছবিটি নিয়েই এখন জল্পনার ঝড় উঠেছে। টলিপাড়ার একাংশের মতে, হয়তো এটি তাঁর পরবর্তী কাকাবাবু ছবি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, পরিচালক হয়তো কেবল দর্শকের কৌতূহল বাড়াতেই এই ছবি পোস্ট করেছেন। কারণ, এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেননি তিনি বা প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ। তবে যদি সত্যিই ‘উল্কা রহস্য’ পর্দায় আসে, তাহলে তা হবে সৃজিতের কাকাবাবু সিরিজের চতুর্থ ছবি।
উল্লেখ্য, সৃজিতের প্রতিটি কাকাবাবু ছবিই দর্শক টেনেছে হলঘরে। মিশরের মরুভূমি থেকে হিমালয়ের তুষারঢাকা শৃঙ্গ, সেখান থেকে কেনিয়ার জঙ্গল— প্রতিটি ছবিই ভিন্ন ভৌগোলিক পটভূমি দর্শকদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় যদি অসমের জঙ্গল আর গোপালপুরের সমুদ্র সৈকত উঠে আসে বড়পর্দায়, তবে নিঃসন্দেহে সেটি হবে এক নতুন ভ্রমণ-অভিযান।
তবে এ-ও প্রশ্ন উঠছে— কাকাবাবুর ভূমিকায় কাকে দেখা যাবে? আগের তিনটি ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত কাকাবাবু দর্শকের মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই অনুরাগীদের প্রত্যাশা, ‘উল্কা রহস্য’ হলে তাতেও তিনি থাকবেন। আবার সন্তুর ভূমিকায় কে আসবেন, তা নিয়েও আগ্রহ তুঙ্গে।
শিল্প মহলের মতে, কাকাবাবুর এই চতুর্থ অভিযানের জন্য যদি সত্যিই সৃজিত ফেরেন, তবে এটি হবে তাঁর কাছে এক বিশেষ চ্যালেঞ্জ। কারণ, আগের ছবিগুলোর মাপকাঠি অতিক্রম করা সহজ নয়। পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহারে নতুনত্ব আনাও জরুরি। বিশেষ করে জটিংগা পাখির রহস্য বা উল্কাখণ্ডের অনুসন্ধান— এগুলো ফুটিয়ে তুলতে প্রয়োজন আধুনিক ভিএফএক্স ও ভিজ্যুয়াল ট্রিটমেন্ট।
এদিকে প্রযোজনা সংস্থা নিয়েও জল্পনা চলছে। এসভিএফ বরাবরই কাকাবাবু সিরিজের প্রযোজনার দায়িত্বে থেকেছে। ‘মিশর রহস্য’ থেকে ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’— সব ছবিতেই তাদের সঙ্গী ছিলেন সৃজিত। তাই ‘উল্কা রহস্য’-এও তারা থাকবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সব মিলিয়ে এখন শুধু অপেক্ষা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। সৃজিত মুখোপাধ্যায় কি সত্যিই কাকাবাবুর জগতে ফের একবার ফিরে আসছেন? তিনি কি আবার ক্যামেরা ধরবেন কাকাবাবুর চতুর্থ অভিযানের জন্য? উত্তর এখনও অজানা। তবে টলিপাড়ার অন্দরে জল্পনা যত বাড়ছে, দর্শকদের কৌতূহলও ততই বেড়ে চলেছে।
এক কথায় বলা যায়, কাকাবাবুর পরবর্তী অধ্যায়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ। আর যদি সত্যিই ‘উল্কা রহস্য’ বড়পর্দায় রূপ নেয়, তবে তা নিঃসন্দেহে হবে ২০২৫ সালের অন্যতম বড় আকর্ষণ। এখন দেখার, সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক পোস্টের আভাসকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় রূপান্তরিত করেন কি না।