নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পদক্ষেপ নিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। রবিবার এনডিএ-র তরফে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হল মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সি পি রাধাকৃষ্ণনকে (C P Radhakrishnan)। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা রাধাকৃষ্ণনকে পরিচিত মুখ বলা হয় দক্ষিণ ভারতীয় রাজনীতিতে। এবার তিনি জাতীয় স্তরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন হওয়ার দৌড়ে।
সি পি রাধাকৃষ্ণনের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা আরএসএসের (RSS) কর্মী হিসেবে। মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকেই তিনি আরএসএসের সক্রিয় সদস্য। ২০২৩ সালে এক অনুষ্ঠানে তিনি নিজেকে প্রকাশ্যে “একজন গর্বিত আরএসএস কর্মী” বলে আখ্যা দেন। রাজনীতির ময়দানে তিনি পরিচিত হন মূলত তামিলনাড়ু বিজেপির এক নিষ্ঠাবান, ফলপ্রসূ এবং সৎ নেতা হিসেবে।
১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে কোয়েম্বাটুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়ে টানা দু’বার জয়লাভ করেন তিনি। বিশেষত ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল রাজ্যের সর্বোচ্চ, যা হয়েছিল কোয়েম্বাটুর বিস্ফোরণের অল্প কিছুদিন পর—এক বিস্ফোরণ যা অভিযোগ অনুসারে তৎকালীন বিজেপি নেতা এল কে আডবানিকে লক্ষ্য করেই ঘটানো হয়েছিল।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে সি পি রাধাকৃষ্ণনের রয়েছে নানা দায়িত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন এবং ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব দেয়।
ঝাড়খণ্ডের রাজভবনে তাঁর সময়কাল বেশ ঘটনাবহুল ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি রাজ্যের একাধিক জায়গায় সফরে যান এবং বলেন যে, তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করতে চান। সেখানকার আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা উন্নত করা ছিল তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। তিনি প্রকাশ্যে বলেন, আদিবাসীদের ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’-এর আওতার বাইরে রাখা উচিত। এমন রাজনৈতিক বার্তা তাঁর ভূমিকাকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।
বিশেষত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত শুরু হলে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। যদিও রাধাকৃষ্ণন মন্তব্য করেছিলেন—দোষী প্রমাণিত হলে যেকোনও ব্যক্তিকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
তামিলনাড়ুতেও তাঁর নাম রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে আসে। বিশেষ করে ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্টালিনের “সনাতন ধর্ম নির্মূল” মন্তব্যের পর রাধাকৃষ্ণন বলেন, উদয়নিধি এখনও “একজন শিশু” এবং যারা সনাতন ধর্ম ধ্বংস করার চেষ্টা করবে, তারা নিজেরাই বিনাশ হবে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে তিনি মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঘোষণা এনডিএ শিবিরে এক বড় রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ ভারত থেকে আসা রাধাকৃষ্ণনের প্রার্থীতা বিজেপি ও এনডিএ-র কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আগামী দিনে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সমীকরণ আরও স্পষ্ট হবে। তবে একথা স্পষ্ট, সি পি রাধাকৃষ্ণনের প্রার্থীতা এনডিএ-র তরফে এক অভিজ্ঞ, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন এবং দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।