রাজধানী দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসন এবং আধুনিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার উদ্বোধন করবেন দুটি বৃহৎ জাতীয় সড়ক প্রকল্প। মোট ১১,০০০ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের অন্তর্গত হচ্ছে— দিল্লি অংশের দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে এবং আরবান এক্সটেনশন রোড-II (UER-II)।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের (PMO) তরফে জানানো হয়েছে, এই দুটি সড়ক চালু হলে দিল্লি ও এনসিআর অঞ্চলে যাতায়াত অনেক সহজ হবে, ভ্রমণ সময় কমবে এবং শহরের ভেতরকার যানবাহনের চাপও অনেকাংশে হ্রাস পাবে। পাশাপাশি এই প্রকল্পগুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর “বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণের ভিশন”-এর প্রতিফলন, যা মানুষের জীবনযাত্রা সহজতর করবে এবং নির্বিঘ্ন গতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
দিল্লি অংশের দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫,৩৬০ কোটি টাকা। প্রায় ১০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশ রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত রুটে যান চলাচল অনেক সহজ করবে।
এই এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করবে—
যশোভাবন কনভেনশন সেন্টার (ইয়শোবুমি), দিল্লি মেট্রোর ব্লু লাইন ও অরেঞ্জ লাইন, নবনির্মীয়মান বিজওয়াসন রেলস্টেশন এবং দ্বারকা ক্লাস্টার বাস ডিপো।
গত বছর মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদী এর হরিয়ানা অংশের উদ্বোধন করেছিলেন, যার দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ কিলোমিটার। এবার দিল্লির অংশকে দু’টি প্যাকেজে ভাগ করে তৈরি করা হয়েছে—
প্যাকেজ-I: শিবমূর্তি ইন্টারসেকশন থেকে দ্বারকা সেক্টর-২১ পর্যন্ত রোড আন্ডার ব্রিজ (RUB) পর্যন্ত, দৈর্ঘ্য ৫.৯ কিমি।
প্যাকেজ-II: দ্বারকা সেক্টর-২১ RUB থেকে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত পর্যন্ত, দৈর্ঘ্য ৪.২ কিমি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্যাকেজ-II সরাসরি সংযুক্ত হবে UER-II-এর সঙ্গে, যা রাজধানীর বাইপাস হিসেবে কাজ করবে এবং যানবাহনের চাপ কেন্দ্রীয় দিল্লির ভেতরে না গিয়ে বাইরের দিকে প্রবাহিত করবে।
আরবান এক্সটেনশন রোড-II (UER-II):
দ্বিতীয় বৃহৎ প্রকল্পটি হল আরবান এক্সটেনশন রোড-II। প্রায় ৫,৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রাস্তার আলিপুর থেকে দিচাঁও কালান পর্যন্ত অংশটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এই রোড চালু হলে—
দিল্লির ইনার রিং রোড ও আউটার রিং রোড-এর যানজট অনেকটাই হ্রাস পাবে, বিশেষত ধৌলা কুাঁ, মুকারবা চক এবং জাতীয় সড়ক NH-9 এ চাপ কমবে, দিল্লি থেকে বহাদুরগড় ও সোনিপত-এর সংযোগ আরও উন্নত হবে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় জানিয়েছে, এই প্রকল্প শুধু দিল্লির যানবাহনের চাপ কমাবে না, বরং শিল্পাঞ্চলগুলির সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি করবে, পণ্য পরিবহণ দ্রুত করবে এবং এনসিআর অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করবে।
দিল্লি প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি মানুষের যাতায়াতের ভার বহন করে। এনসিআরের বিভিন্ন শহর থেকে আসা যাত্রীদের বড় অংশ রাজধানীর রিং রোড ও কেন্দ্রীয় সড়কগুলিতে যানবাহনের চাপ বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে যানজট, দূষণ ও সময়ের অপচয় দীর্ঘদিনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে বিমানবন্দর, কনভেনশন সেন্টার এবং মেট্রো নেটওয়ার্কের সঙ্গে একাধিক রুট সরাসরি যুক্ত হবে। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লি থেকে হরিয়ানা ও অন্যান্য এনসিআর শহরে যাতায়াত আরও নির্বিঘ্ন হবে।
অন্যদিকে UER-II মূলত রাজধানীর একটি বাইপাস করিডর, যা ট্রাক, লরি ও ভারী যানবাহনকে শহরের ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে বাইরের রাস্তায় সরিয়ে নেবে। এর ফলে শহরের ভেতরে যানজট ও বায়ু দূষণ অনেকটাই হ্রাস পাবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দ্রুত পণ্য পরিবহণ এবং শিল্পাঞ্চলগুলির সঙ্গে সড়ক সংযোগ বাড়লে এনসিআর অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।
গত এক দশকে মোদী সরকার সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের মাধ্যমে বহু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিশেষ করে ভারত মালা প্রকল্প ও এক্সপ্রেসওয়ে করিডরগুলির মাধ্যমে দেশের পরিবহণ ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করার প্রচেষ্টা চলছে।
সরকারের দাবি, কেবলমাত্র দিল্লি ও এনসিআরে নয়, দেশের সর্বত্রই দ্রুতগামী এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে, শহরগুলির সংযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ নাগরিকের জীবনযাত্রা আরও সহজ হবে।
দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে ও আরবান এক্সটেনশন রোড-II চালু হলে রাজধানী দিল্লি শুধু যানজট মুক্ত হবে না, বরং একটি টেকসই ও আধুনিক নগর পরিবহণ ব্যবস্থার দিকেও এক ধাপ এগোবে। ১১ হাজার কোটি টাকার এই দুটি মেগা প্রকল্প এনসিআরের মানুষের কাছে নতুন আশার বার্তা বয়ে আনবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।