কলকাতা: পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর (Vivek Agnihotri) নতুন ছবি দ্য বেঙ্গল ফাইলস নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তাল বাংলা রাজনীতি। ছবির ট্রেলার প্রকাশ থেকে শুরু করে কলকাতায় প্রচার অভিযানে একের পর এক বাধার মুখে পড়েছেন পরিচালক। তাঁর বক্তব্য, বাংলার মতো সংস্কৃতিমনস্ক রাজ্যে এসে ছবির প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়েই ফের রাজনৈতিক কাঁটাছেঁড়ার সূত্রপাত।
শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সরব হয়েছেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবির কনটেন্টে বাংলার উন্নয়নের কোনও প্রতিফলন নেই। বরং এতে রয়েছে বাংলার প্রতি অপপ্রচার, বিদ্বেষ ও কুৎসা। কুণাল ঘোষের ভাষায়, “যে বাংলা গোটা দেশের কাছে উন্নয়নের মডেল, সেই বাংলাকে কলুষিত করতে বিজেপির রাজনৈতিক অ্যাসাইনমেন্টে বারবার আসছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী। তাঁর এই প্রচেষ্টা আসলে বাংলার সংস্কৃতিকে আঘাত করা।”
পরিচালক যখন কলকাতায় ছবির প্রচারে বাধার মুখে পড়েন, তখনই তিনি মহানায়ক সত্যজিৎ রায়ের নাম উল্লেখ করে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি জানান, সত্যজিৎ রায়ের রাজ্যে এসে এমন পরিস্থিতি তিনি আশা করেননি। আর সেখানেই নতুন বিতর্ক তৈরি হয়। কুণাল ঘোষ পাল্টা মন্তব্য করে বলেন, “সত্যজিৎ রায়ের নাম বিবেক অগ্নিহোত্রীর মুখে মানায় না। সত্যজিৎ রায়ের বাংলাকে তিনি অপমান করছেন। এই বাংলার মাটিকে রাজনৈতিক বিষে ভরিয়ে তুলতে এসেছেন।”
কুণাল ঘোষ আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “এই বিবেক আসলে বিবেকহীন বিবেক। বিজেপির কাছে উনার নাম বন্ধক রাখা আছে। যেখানে বিজেপি তাঁকে পাঠাচ্ছে, সেখানেই বিষ ছড়াতে তিনি হাজির হচ্ছেন। গুজরাট, মনিপুর কিংবা উত্তরপ্রদেশে কেন তিনি ফাইলস বানান না? সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতিই তো ভয়ঙ্কর। তাহলে কেন শুধু বাংলা নিয়ে বিভ্রান্তিকর ছবি বানাচ্ছেন?”
উল্লেখ্য, বিবেক অগ্নিহোত্রীর এই ছবি ঘিরে ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। কলকাতার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ পরিচালক অভিযোগ করেন, বাংলায় গণতন্ত্রের নামে বাকস্বাধীনতার গলা টিপে ধরা হচ্ছে।
তবে কুণাল ঘোষ তার জবাবে স্পষ্ট করে দেন, “বাংলা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই তিনি এখানে প্রচার চালাতে পারছেন। অন্যথায় উনাকে অনেক আগেই আটকে দেওয়া হত। আসল সত্য হল, উনি বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে বাংলায় এসেছেন। সত্যজিৎ রায়ের নাম নিয়ে ভিকটিম কার্ড খেলতে চাইছেন। কিন্তু বাংলার মানুষ এই বিষ ছড়ানো প্রচারণায় কান দেবেন না।”
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, দ্য বেঙ্গল ফাইলস আসলে দ্য কাশ্মীর ফাইলস-এর ধাঁচে তৈরি। তবে এই ছবি ঘিরে বিরোধী স্বর বাংলায় আরও তীব্র। শাসকদলের বক্তব্য, বাংলার সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্পকলার ঐতিহ্যকে বিকৃত করার প্রচেষ্টা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর এই উদ্যোগ ঘিরে রাজ্যে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও গভীর হচ্ছে। একদিকে বিজেপি শিবির ছবিকে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার বলে প্রচার করছে, অন্যদিকে তৃণমূলের মতে, এটি শুধুমাত্র বাংলার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর রাজনৈতিক মাধ্যম। সবমিলিয়ে, দ্য বেঙ্গল ফাইলস ঘিরে বিতর্ক এখন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।