নিজের পরিবারকেই অপহরণ! পুলিশের জালে ক্যাব চালক

উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এক ক্যাব চালককে (Cab Driver) গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি একটি পরিবারকে তাদের যাত্রার সময় বন্দি করে রেখে পুলিশের তাড়া…

Cab Driver arrested

উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এক ক্যাব চালককে (Cab Driver) গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি একটি পরিবারকে তাদের যাত্রার সময় বন্দি করে রেখে পুলিশের তাড়া খেয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়েছিলেন। 

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত চালকের নাম নাসিম, যিনি হরিয়ানার পালওয়ালের বাসিন্দা। তার কাছ থেকে দুটি আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে—একটি ‘নাসিম’ নামে এবং অন্যটি ‘সোনু’ নামে।

   

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১:৩০ নাগাদ গ্রেটার নয়ডার বাসিন্দা সঞ্জয় মোহন তাঁর স্ত্রী এবং চার বছরের মেয়েকে নিয়ে দিল্লির কনট প্লেসে যাওয়ার জন্য একটি ক্যাব বুক করেন। ক্যাবটি ছিল একটি হরিয়ানা নম্বর প্লেটের ওয়াগনআর। যাত্রা শুরু হওয়ার পর পার্থলা সেতুতে পুলিশ চালককে গাড়ি থামানোর সংকেত দেয়।

কিন্তু চালক নাসিম পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে ব্যারিকেড ভেঙে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এই হঠাৎ পদক্ষেপে হতবাক হয়ে যাওয়া পরিবারটি চালককে বারবার গাড়ি থামাতে এবং তাদের নামিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু নাসিম তাদের কথা উপেক্ষা করে কয়েক কিলোমিটার ধরে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে থাকেন, পিছনে পুলিশের পিসিআর ভ্যান তাড়া করতে থাকে।

ভিডিওতে দেখা যায়, চার বছরের শিশুটি ভয়ে কাঁদছে এবং তার বাবা-মা বারবার চালককে গাড়ি থামানোর জন্য অনুরোধ করছেন। সঞ্জয় মোহন এমনকি পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জরিমানা পরিশোধ করার প্রস্তাব দেন, কিন্তু নাসিম জানান, তিনি থামলে তার গাড়ি বাজেয়াপ্ত হতে পারে।

অবশেষে, পুলিশের তাড়া থেকে বাঁচতে পেরে নাসিম টিপি নগরে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য গাড়ি থামান, এবং পরিবারটি নামার সুযোগ পায়। পরিবারটি নামার সঙ্গে সঙ্গে নাসিম পালিয়ে যান। সঞ্জয় মোহন জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তার স্ত্রীর হাতে সামান্য আঘাত লেগেছে।

ঘটনাটির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর নয়ডা পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। কেন্দ্রীয় নয়ডার ডিসিপি শক্তি মোহন আবস্থি জানিয়েছেন, “১৪ আগস্ট একটি ভাইরাল ভিডিওতে ক্যাব চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ফেজ ৩ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং পরে সাহারা কাট থেকে অভিযুক্ত নাসিমকে গ্রেফতার করা হয়।” পুলিশ গাড়িটি জব্দ করেছে এবং ২৯,৫০০ টাকার চালান জারি করেছে।

Advertisements

নাসিমের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ১৩৭(২) (অপহরণ), ১২৭(২) (অন্যায়ভাবে আটক), ২৮১ (বেপরোয়া গাড়ি চালানো), ৩১৯ (প্রতারণা), ৩১৮(৪) (প্রতারণা), ৩৩৬(২) (জালিয়াতি) এবং ৩৩৮ (মূল্যবান নথির জালিয়াতি) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, নাসিম একটি রাইড-হেইলিং অ্যাপে ‘সোনু’ নামে নিবন্ধিত ছিলেন এবং তার কাছে দুটি আধার কার্ড পাওয়া গেছে, যার মধ্যে একটি জাল।

এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। সঞ্জয় মোহন নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি শেয়ার করেছিলেন, যেখানে গাড়ির নম্বর (HR38AG7067) স্পষ্ট দেখা যায়। এই ভিডিওটি পুলিশের কাছে অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।

এক্স-এ পোস্ট করা একটি টুইটে গ্রেটার নয়ডা ওয়েস্ট অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, “নয়ডা থেকে দিল্লি যাওয়ার সময় পুলিশ চেকিংয়ের সময় চালক গাড়ি দ্রুত চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরিবারটি গাড়ি থামানোর জন্য কান্নাকাটি করছিল।”

ঘটনাটি উবারের মাধ্যমে বুক করা ক্যাবে ঘটেছিল। উবার ইন্ডিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় সঞ্জয় মোহনের পোস্টের জবাবে বলেছে, “এই ধরনের আচরণ আমাদের প্ল্যাটফর্মে গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি আমাদের কমিউনিটি গাইডলাইনের লঙ্ঘন। আমরা চালকের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”

পরিবারের দাবি মেনে কল্যাণী এমসে নার্সের ময়নাতদন্ত

এই ঘটনা নয়ডায় ক্যাব পরিষেবার নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশের তৎপরতায় অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও, এই ধরনের ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পুলিশ জনগণকে অজানা গাড়িতে না ওঠার এবং ক্যাব বুক করার সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এই ঘটনা ভবিষ্যতে ক্যাব অ্যাগ্রিগেটর প্ল্যাটফর্মগুলির উপর চালক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আরও কঠোর নিয়ম প্রয়োগের দাবি তুলেছে।