কেন্দ্রীয় সরকার পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) কাঠামোতে এক বড় ধরনের সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, বর্তমান জটিল হার কাঠামো সরিয়ে একটি সরলীকৃত ব্যবস্থা আনা হবে, যেখানে থাকবে মাত্র দুটি প্রধান স্ল্যাব — ৫% ও ১৮%। পাশাপাশি বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর (sin) পণ্যের জন্য রাখা হবে বিশেষ ৪০% করের হার। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক আশ্বাসের সাথে মিল রেখে এই নতুন জিএসটি ব্যবস্থা দীপাবলির আগেই চালু হতে পারে।
সাধারণ মানুষের ঝুড়িতে কম কর:
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে পিটিআই জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও দৈনন্দিন ব্যবহারের বেশিরভাগ পণ্যকে প্রস্তাবিত ৫% স্ল্যাবে আনা হবে। বর্তমানে ১২% করের আওতায় থাকা প্রায় ৯৯% পণ্য এই নিম্ন হারে স্থানান্তরিত হবে, যার ফলে সেগুলির দাম আরও সাশ্রয়ী হবে।
একইভাবে, বর্তমানে ২৮% করের আওতায় থাকা প্রায় ৯০% করযোগ্য পণ্যকে ১৮% স্ল্যাবে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে সাধারণ ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের করের বোঝা হালকা হবে। মধ্যবিত্ত, শিক্ষার্থী, নারী ও কৃষক — সকলের জন্যই এই পদক্ষেপ স্বস্তির খবর হিসেবে দেখা হচ্ছে। একইসাথে, এতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বা ‘aspirational’ পণ্যের চাহিদাও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্যে বিশেষ কর:
তামাকজাত পণ্যের মতো বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর দ্রব্যের জন্য রাখা হবে ৪০% জিএসটি হার। সরকার জানিয়েছে, এর ফলে মোট করের বোঝা বর্তমানের প্রায় ৮৮% পর্যায়েই বজায় থাকবে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বাস্থ্যহানিকর বা অপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর উচ্চ কর আরোপ করে সেগুলির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা, অথচ সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসে কর কমিয়ে স্বস্তি দেওয়া।
কাঠামোগত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ:
অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাবটি হার যুক্তিযুক্তকরণ নিয়ে গঠিত জিএসটি কাউন্সিলের গ্রুপ অব মিনিস্টার্স (GoM)-এর কাছে জমা দিয়েছে। কর ক্ষতিপূরণ সেস (GST compensation cess) বন্ধ হওয়ার ফলে সরকার এখন এই সংস্কারের জন্য আর্থিকভাবে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছে। এর মাধ্যমে উল্টো শুল্ক কাঠামো (inverted duty structure) ঠিক করা, পণ্যের শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে বিরোধ কমানো এবং ব্যবসার জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্য রয়েছে।
নতুন কাঠামোতে ইনপুট ও আউটপুট করের হার মিলিয়ে দেওয়া হবে, যাতে অব্যবহৃত ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট জমে না থাকে। পাশাপাশি, দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করা এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কর দাখিল ও আনুষঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সহজ করার দিকেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যাতে সাধারণ করদাতাদের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হয়।
মোদীর সংস্কার বার্তা:
আজ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে “ডাবল দীপাবলি”-র প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “জিএসটি হার ব্যাপকভাবে কমানো হবে। সাধারণ মানুষের জন্য করের বোঝা হ্রাস পাবে।” এর মাধ্যমে কর কাঠামোকে আরও নাগরিকবান্ধব করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে চালু হওয়ার পর থেকে জিএসটি দেশব্যাপী একক পরোক্ষ কর ব্যবস্থার সূচনা করেছে। এবার এই নতুন সংস্কারকে ধরা হচ্ছে ভারতের কর কাঠামোকে আরও সরল ও কার্যকর করার পরবর্তী বড় পদক্ষেপ হিসেবে। সরকার আশা করছে, এর ফলে শুধু ভোক্তা নয়, শিল্পক্ষেত্রও দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবে।
কী বদলাবে, কে লাভবান?
বর্তমান ব্যবস্থায় ৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮% সহ একাধিক কর স্ল্যাব রয়েছে, যার ফলে প্রায়ই ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্যের কর শ্রেণিবিন্যাস জটিল হয়ে দাঁড়ায়। নতুন পরিকল্পনায় ১২% স্ল্যাব প্রায় পুরোপুরি বিলুপ্ত হবে এবং তার অধিকাংশ পণ্য ৫% স্ল্যাবে চলে আসবে। এতে বাজারে প্রয়োজনীয় ও সাধারণ ব্যবহারের জিনিসের দাম কমতে পারে।
অন্যদিকে, ২৮% স্ল্যাবও অনেকটাই খালি হয়ে যাবে, কারণ সেখানকার বেশিরভাগ পণ্য ১৮% স্ল্যাবে চলে আসবে। তবে যেসব পণ্য বিলাসবহুল বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলিতে উচ্চ কর বজায় থাকবে — বরং বিশেষ ৪০% কর ধার্য করা হবে, যা মোট করের হার বর্তমানের সমান রাখবে।
অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব:
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সংস্কারের ফলে ভোক্তা ব্যয় বাড়তে পারে, যা বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করবে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি কর ছাড়ের সুবিধা পেলে খুচরা বাজারে উচ্ছ্বাস তৈরি হতে পারে। এছাড়া, করের জটিলতা কমলে ব্যবসার পরিবেশ আরও সহজ হবে, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, কর কমানোর ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ে প্রাথমিকভাবে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কিন্তু সরকার আশা করছে, চাহিদা ও ব্যবসার প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে সেই ঘাটতি দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে।
জিএসটির এই প্রস্তাবিত সংস্কার যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি হবে ২০১৭ সালের পর কর ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। সাধারণ মানুষের জন্য কর হ্রাস, ব্যবসার জন্য সরল কাঠামো, এবং ক্ষতিকর পণ্যে কঠোর কর — সব মিলিয়ে এটি হতে পারে কর সংস্কারের এক নতুন যুগের সূচনা।