ভূপতিনগর: অবৈধ বিস্ফোরক এবং বোমা তৈরির মশলা সহ এক দাপুটে তৃণমূল নেতাকে (Trinamool Leader) গ্রেফতার করল ভূপতিনগর থানার পুলিশ। অভিযুক্তের নাম সুবীর মাইতি, যার বাড়ি ভূপতিনগর থানার অন্তর্গত কমলনয়ন বাড় গ্রামে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইটাবেড়িয়া বাজারে বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণে বারুদ ও বোমা তৈরির মশলা বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশের দাবি, ধৃত সুবীর মাইতি এলাকার পরিচিত তৃণমূল নেতা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কমলনয়ন বাড় গ্রামে ‘দশকর্মা’ নামে একটি দোকান রয়েছে সুবীর মাইতির। ওই দোকানের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বোমা তৈরির মশলা ও বারুদ মজুত রাখা হতো এবং বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। শুক্রবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ দোকানে হানা দিয়ে ৩৫ কেজি বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার করে। পাশাপাশি, গাড়ি করে অন্যত্র পাচারের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয় পুলিশ। ধৃতকে শনিবার কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হবে।
ভূপতিনগর থানার ওসি শেখ মহম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “অবৈধ বাজি ও বিস্ফোরকের বিরুদ্ধে গত দশ দিন ধরে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবেই এদিন এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক জব্দ হয়েছে।”
বিজেপির দাবি, এই সুবীর মাইতি-ই ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতের নাড়ুয়াভিলা বিস্ফোরণকাণ্ডে অভিযুক্ত ছিলেন। সেই ঘটনায় তৃণমূলের বুথ সভাপতিসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল এবং কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়ভার এনআইএ নেয়। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তৎকালীন এনআইএ তদন্তে সুবীর মাইতির নাম অভিযুক্তদের তালিকায় ছিল। এছাড়া ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি কর্মী ও প্রার্থীর পরিবারের উপর হামলা ও গুলিচালনার অভিযোগেও তার নাম উঠে আসে।
ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে এলাকা দখলের জন্যই এই বিস্ফোরক মজুত করা হচ্ছিল। সুবীর মাইতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুলিশ কতদূর সঠিকভাবে তদন্ত করবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। অতীতে প্রমাণ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। প্রয়োজনে আমরা এনআইএ-কে জানাব, যাতে তারা পুলিশ তদন্তকেও আওতায় আনে।”
বিজেপির আরও দাবি, ধৃতকে ছাড়িয়ে নিতে শুক্রবার রাতেই থানায় হাজির হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এ প্রসঙ্গে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র অপরেশ সাঁতরা বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
এদিকে, বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, কারণ এই অঞ্চল অতীতে একাধিকবার বোমা বিস্ফোরণের সাক্ষী হয়েছে। নাড়ুয়াভিলা বিস্ফোরণের স্মৃতি এখনও তাজা, আর সেই ঘটনায় অভিযুক্তের ফের গ্রেফতার হওয়া রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জব্দ হওয়া বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জামের ফরেনসিক পরীক্ষা হবে এবং এর উৎস ও গন্তব্য খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি, সুবীর মাইতির অতীত রেকর্ড ও রাজনৈতিক যোগসূত্রের দিকেও তদন্তকারীরা নজর দিচ্ছেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই গ্রেফতার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে বাকযুদ্ধ আরও তীব্র করবে। বিজেপি যেখানে তৃণমূলকে সন্ত্রাসবাদী রূপে তুলে ধরছে, সেখানে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দাবি করতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ভূপতিনগরের বিস্ফোরক কাণ্ড রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।