দিল্লি: রাজধানীর ঐতিহাসিক হুমায়ুনের সমাধি সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। শুক্রবার বিকেলে নিজামুদ্দিন এলাকায় একটি দুই-কক্ষবিশিষ্ট বাড়ির ছাদ ভেঙে (Roof Collapses) পড়ে মৃত্যু হল পাঁচ জনের, যাদের মধ্যে তিন জন মহিলা। ঘটনাস্থলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, দ্রুত উদ্ধারকাজে নামে দমকল, পুলিশ ও এনডিআরএফের কর্মীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের সকলকে এমস (AIIMS) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছে সাফদরজং ও লোকনায়ক হাসপাতালে। দিল্লি ফায়ার সার্ভিস (DFS)-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বিকেল ৩.৫০ নাগাদ ফোনে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটি দমকল ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। প্রায় ১০ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (DCP) হেমন্ত তিওয়ারি বলেন, “মোট ১০-১২ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে এমস ট্রমা সেন্টার এবং লোকনায়ক হাসপাতাল রয়েছে… পরবর্তী আপডেট পরে দেওয়া হবে।” উদ্ধারকাজে যুক্ত ছিলেন দিল্লি ফায়ার সার্ভিস, ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (NDRF) ও স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীরা। এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ভবনটি দরগাহ শরীফ পাত্তে শাহ-এর অংশ ছিল। এটি নিউ হরাইজন স্কুলের বিপরীতে অবস্থিত। আगा খান ট্রাস্ট ফর কালচারের প্রকল্প পরিচালক রতিশ নন্দা জানান, এই দুই-তলা বাড়িটি হুমায়ুনের সমাধি কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীরের সঙ্গে লাগোয়া ছিল। ধ্বংসস্তূপের কিছু অংশ সমাধি কমপ্লেক্সের ভেতরে পড়লেও ঐতিহাসিক স্থাপনাটি কোনো ক্ষতি পায়নি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বৃহস্পতিবারই দিল্লির বসন্ত বিহারে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে, যখন সিঁড়ির পাশে বসে থাকা ৯ ও ১০ বছর বয়সী দুই শিশু একটি প্রাচীর ধসে মৃত্যুবরণ করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita)-এর ১০৬ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হুমায়ুনের সমাধি এবং আশেপাশের এলাকা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হলেও, এখানে বহু পুরনো এবং জরাজীর্ণ বাড়িঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি উঠলেও, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুক্রবারের এই দুর্ঘটনা সেই অব্যবস্থাপনার দিকটিই আবারও স্পষ্ট করে দিল।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ও আহতদের পরিচয় নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া চলছে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে, কীভাবে এবং কেন এই ছাদ ভেঙে পড়ল, তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পুরনো ভবনের কাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, উদ্ধারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা স্থান ত্যাগ করবেন না। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “আমরা হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই, তারপর ধুলোয় ঢেকে যায় চারপাশ। দমকল ও পুলিশ দ্রুত আসে, কিন্তু দৃশ্যটা ছিল ভয়ঙ্কর।”
এই মর্মান্তিক ঘটনায় দিল্লির পুরনো স্থাপনার নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে দ্রুত সংস্কার না করলে, এ ধরনের দুর্ঘটনা ফের ঘটতে পারে।