উত্তর প্রদেশের লখনউ থেকে বিহারের বরৌনি যাওয়া লখনউ-বরৌনি এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে (Illegal Liquor)। ট্রেনের এসি কোচে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ না করার অভিযোগের পর রেল কর্মীরা তদন্ত করতে গিয়ে এসি ডাক্টের ভেতর থেকে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ মদের প্যাকেট উদ্ধার করেছেন।
এই ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে হতবাক অবস্থা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।ঘটনার বিবরণলখনউ-বরৌনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার রাতে লখনউ থেকে যাত্রা শুরু করে। ট্রেনের এসি কোচে থাকা যাত্রীরা লক্ষ্য করেন যে কোচের ভেতর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ করছে না, এবং বগিটি অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে উঠছে।
এই বিষয়ে যাত্রীরা ট্রেনের কর্মীদের কাছে অভিযোগ জানান। অভিযোগের ভিত্তিতে রেল কর্মীরা এসি ডাক্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন যে ডাক্টের ভেতরে বিপুল পরিমাণে মদের প্যাকেট লুকানো রয়েছে। এই প্যাকেটগুলির কারণে বায়ু চলাচল ব্যাহত হয়েছিল, ফলে এসি ব্যবস্থা কাজ করছিল না।প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই অবৈধ মদের প্যাকেটগুলি সম্ভবত উত্তর প্রদেশ থেকে বিহারে পাচারের উদ্দেশ্যে লুকানো হয়েছিল।
বিহারে মদ নিষিদ্ধ হওয়ায় এই রুটে অবৈধ মদ পাচারের ঘটনা আগেও লক্ষ্য করা গেছে। তবে, এসি ডাক্টের মতো স্থানে এত বড় পরিমাণে মদ লুকানোর ঘটনা এই প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে।যাত্রীদের প্রতিক্রিয়াএই ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একজন যাত্রী, অমিত কুমার, বলেন, “আমরা এসি কোচে যাত্রা করছিলাম আরামদায়ক ভ্রমণের আশায়।
কিন্তু এসি কাজ না করায় আমরা অস্বস্তিতে ছিলাম। এরপর যখন জানলাম যে এসি ডাক্টে মদ লুকানো ছিল, তখন আমরা হতবাক হয়ে গেছি।” আরেক যাত্রী, রিনা দেবী, বলেন, “এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই ধরনের ঘটনা ঠেকানোর জন্য আরও কঠোর নজরদারি করা উচিত।”
ঘটনার খবর পাওয়ার পর রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) এবং স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। উদ্ধার করা মদের প্যাকেটগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, এবং এগুলির পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণের কাজ চলছে। পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছি এবং ট্রেনের কর্মী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছি।
এই অবৈধ মদ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।”রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা এই ঘটনার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তারা ট্রেনের এসি কোচগুলিতে নিয়মিত পরিদর্শন জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই ঘটনা উত্তর প্রদেশ ও বিহারের মধ্যে অবৈধ মদ পাচারের একটি গুরুতর সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। বিহারে ২০১৬ সাল থেকে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে পাচারকারীরা নানা উপায়ে এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের চেষ্টা করছে। ট্রেনের এসি ডাক্টের মতো অস্বাভাবিক স্থানে মদ লুকানোর এই ঘটনা পাচারকারীদের কৌশলের নতুন মাত্রা প্রকাশ করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে, এবং অনেকে রেলওয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার সমালোচনা করেছেন।লখনউ-বরৌনি এক্সপ্রেসে এই অভূতপূর্ব ঘটনা রেলওয়ে নিরাপত্তা এবং অবৈধ মদ পাচারের সমস্যার প্রতি নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উপর চাপ বাড়ছে।
প্রতিশোধের নেশায় বিষ মিশিয়ে হত্যা ১২ পথকুকুরের
পুলিশের তদন্তে এই পাচারের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা গেলে এই ধরনের অপরাধের জাল ভাঙতে সহায়ক হবে। এই ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে শুধুমাত্র ক্ষোভই নয়, বরং রেল ভ্রমণের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও সৃষ্টি করেছে।