সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Akhilesh) এবং তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। স্বাধীনতা দিবসের দিন একটি জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে অখিলেশ বলেন, “তিনি বিজেপির প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির প্রথম সম্মেলনে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজবাদের পথ অনুসরণ করবে।
কিন্তু সংঘ পরিবারের লোকদের পথ ধর্মনিরপেক্ষ বা সমাজবাদী নয়। ইয়ে মুখ সে তো স্বদেশী হ্যায়, লেকিন মন সে বিদেশী হ্যায়।” অর্থাৎ, তিনি মুখে স্বদেশী কথা বললেও মনে তিনি বিদেশি আদর্শে বিশ্বাসী।অখিলেশ যাদব তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপির নীতির তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, বিজেপি যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন তারা ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজবাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তাদের কার্যকলাপ সেই আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। অখিলেশের মতে, বিজেপি ও সংঘ পরিবারের নীতি দেশের ঐক্য ও বৈচিত্র্যের পরিবর্তে বিভাজনমূলক রাজনীতির উপর জোর দিচ্ছে।
তিনি বলেন, “মুখে স্বদেশী কথা বলে জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তাদের মনের মধ্যে বিদেশি আদর্শ লুকিয়ে আছে।”বিজেপির নীতির সমালোচনাঅখিলেশ আরও অভিযোগ করেন যে বিজেপি সরকারের নীতি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য নয়, বরং কর্পোরেট ও বিদেশি স্বার্থের পক্ষে কাজ করছে।
তিনি বলেন, “বিজেপি সরকারের আমলে কৃষক, যুবক ও গরিব মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা শুধু বড় বড় কথা বলে এবং জনগণের সামনে স্বদেশী হওয়ার ভান করে।” অখিলেশ দাবি করেন যে বিজেপির নীতি দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
অখিলেশ যাদব সংঘ পরিবারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “সংঘ পরিবারের লোকেরা ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজবাদের কথা বলে না। তাদের আদর্শ ভারতের সংবিধানের মূল মর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।” তিনি আরও বলেন যে বিজেপি সরকার সংঘ পরিবারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে, যা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
অখিলেশ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে তারা বিজেপির এই ‘মুখে স্বদেশী, মনে বিদেশি’ নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তিনি বলেন, “ভারতের জনগণকে এই সরকারের প্রকৃত মুখ চিনতে হবে। তারা যে স্বদেশী কথা বলে, তা কেবল ভোট পাওয়ার জন্য। তাদের নীতি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য নয়, বরং বিদেশি শক্তি ও কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষার জন্য।” তিনি সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে দেশের কৃষক, শ্রমিক ও যুবকদের স্বার্থে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
অখিলেশের এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির সমর্থকরা তাঁর এই মন্তব্যকে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে, বিজেপির মুখপাত্ররা অখিলেশের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। তারা বলছেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতার জন্য কাজ করছেন এবং অখিলেশের এই মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সামাজিক মাধ্যমে অখিলেশের এই বক্তব্য নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে যেখানে সমাজবাদী পার্টির সমর্থকরা তাঁর এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে বিজেপির সমালোচনা করছেন, সেখানে বিজেপি সমর্থকরা এই মন্তব্যকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অপমান হিসেবে দেখছেন। অনেকে বলছেন যে এই ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করবে।
পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যার সমাধানে স্বাধীনতা দিবসীয় ‘লাটসাহেবী’ আশ্বাস
অখিলেশ যাদবের এই বক্তব্য ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। তাঁর ‘মুখে স্বদেশী, মনে বিদেশি’ মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপির নীতির প্রতি তীব্র সমালোচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই বক্তব্য আগামী দিনে উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়। সমাজবাদী পার্টি এই বিষয়টিকে জনগণের মধ্যে তুলে ধরে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।