পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যার সমাধানে স্বাধীনতা দিবসীয় ‘লাটসাহেবী’ আশ্বাস

বারাকপুরের ঐতিহাসিক গান্ধী ঘাটে ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে অনুষ্ঠিত পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে উঠে এল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ। শুক্রবার, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রাজ্যপাল সি…

West bengal Governor CV Anand Bose rape accused by dancer, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে এবার ধর্ষণের অভিযোগ তুললেন এক নৃত্যশিল্পী

বারাকপুরের ঐতিহাসিক গান্ধী ঘাটে ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে অনুষ্ঠিত পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে উঠে এল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ। শুক্রবার, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, প্রশাসনিক আধিকারিকরা এবং বারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক।

অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল বলেন, ভিনরাজ্যে গিয়ে কাজ করা বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, এবং বিষয়টি প্রশাসনিক পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে। তাঁর বক্তব্যে আশার সুর শোনা যায়—এই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি বিশ্বাস করছেন। রাজ্যপাল আরও জানান, আধিকারিকরা বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। তবে ভিনরাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর পুলিশের অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে তিনি সরাসরি কিছু মন্তব্য করেননি।

   

রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পর সাংসদ পার্থ ভৌমিকের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। তিনি বলেন, “ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে বাংলার অবদান অসামান্য। কিন্তু আজ বিজেপি শাসিত বহু রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে, শুধুমাত্র তারা বাংলা ভাষায় কথা বলছে বলেই।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, আন্দামানের সেলুলার জেলের বন্দি তালিকা থেকে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ও উল্লাসকর দত্তের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যা বাংলা ও বাঙালির প্রতি অবমাননার শামিল।

পার্থ ভৌমিকের মতে, স্বাধীনতার ৭৯ বছর পরেও বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয় রক্ষার লড়াই শেষ হয়নি। তাঁর কথায়, “আজ স্বাধীনতা দিবস পালন হচ্ছে, কিন্তু বাংলার মর্যাদা ও ভাষা রক্ষার জন্য আবারও আন্দোলনের সময় এসেছে।” তিনি কটাক্ষ করে আরও বলেন, “রাজ্যপাল আশ্বস্ত করেছেন দেখে ভালো লাগছে। কিন্তু যাদের উপর ভরসা করে উনি বলছেন, তাদের উপর বাংলার মানুষের আস্থা নেই।”

এদিনের অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি গান্ধী ঘাটের ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার গৌরবময় অবদান স্মরণ করা হয়। বক্তারা দেশপ্রেম, ঐক্য ও ভাষার মর্যাদা রক্ষার গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত মানুষদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা, ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

Advertisements

তবে রাজ্যপালের মুখে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ আসায় স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চে রাজনৈতিক রঙের ছোঁয়া পড়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য রাজ্য–কেন্দ্র সম্পর্কের টানাপোড়েনকে নতুন মাত্রা দিল। বিশেষ করে যখন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল ও বিরোধীদের মধ্যে চাপানউতোর তুঙ্গে, তখন রাজ্যপালের এই মন্তব্য রাজনৈতিক পরিসরে আলোড়ন সৃষ্টি করল।

বাংলার বহু শ্রমিক পঞ্জাব, কেরল, মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন। তাদের অনেকেই নির্মাণ, কারখানা, হোটেল এবং কৃষি ক্ষেত্রে যুক্ত। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ উঠেছে, ভিনরাজ্যে কাজ করা বাঙালি শ্রমিকরা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটেই স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চ থেকে রাজ্যপালের বক্তব্য নতুন তাৎপর্য বহন করছে।

বারাকপুরের গান্ধী ঘাট, যা স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী, সেদিন আবারও হয়ে উঠল এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তার ক্ষেত্র। স্বাধীনতা দিবসের আবহে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা ও বাঙালি পরিচয় রক্ষার প্রসঙ্গ—দুটিই সমানভাবে সামনে এল, যা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে।