বাঙালি সুরক্ষায় রাজ্যপালের বার্তা, আস্থা রাখতে পারলেন না পার্থ

স্বাধীনতা দিবসের দিন ব্যারাকপুরের গান্ধী ঘাটে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল গোটা এলাকা। সেদিনের সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা করেন বাংলার রাজ্যপাল…

C.V. Ananda Bose Leads Independence Day Celebrations at Barrackpore’s Gandhi Ghat

স্বাধীনতা দিবসের দিন ব্যারাকপুরের গান্ধী ঘাটে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল গোটা এলাকা। সেদিনের সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা করেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose) । উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষ। কিন্তু দিনটির মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠে রাজ্যপালের(C V Ananda Bose) বক্তব্যে উঠে আসা “বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক” প্রসঙ্গ।

অনুষ্ঠানের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপাল (C V Ananda Bose) সাফ জানিয়ে দেন—বাংলার যে হাজার হাজার শ্রমিক জীবিকার তাগিদে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন, তাঁদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করাই হবে তাঁর অন্যতম অগ্রাধিকার। সাম্প্রতিক সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হেনস্থা, বৈষম্যমূলক আচরণ, এমনকি শারীরিক নিগ্রহের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। বাংলার শ্রমিকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, অন্য রাজ্যে গিয়ে তাঁরা শুধুমাত্র ভাষা ও পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতেই রাজ্যপালের বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

   

সিভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose) বলেন, “আমাদের শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। তাঁরা শুধু বাংলার নয়, গোটা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তাঁদের নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি এবং সঠিক কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নেব।” তিনি আরও জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানে রাজ্য প্রশাসন অন্যান্য রাজ্যের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে এবং প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় স্তরে বিষয়টি তোলা হবে।

অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন উপস্থিত সাংসদ পার্থ ভৌমিকও। রাজ্যপালের পাশেই বসা ছিলেন তিনি। পার্থ ভৌমিক পরে সাংবাদিকদের বলেন, “রাজ্যপালের আশ্বাস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে তা সময় বলবে। শ্রমিকদের সুরক্ষায় শুধু কথার প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়, চাই কঠোর প্রয়োগ।” তাঁর কথায় কিছুটা সংশয়ের সুর থাকলেও তিনি স্বীকার করেন যে, বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ স্তরে আলোচনা এবং প্রতিশ্রুতি এক ইতিবাচক পদক্ষেপ।

ব্যারাকপুরের গান্ধী ঘাটের অনুষ্ঠানমঞ্চে এদিন স্বাধীনতা দিবসের আবহ ছিল অন্য রকম। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর বাজতে থাকে জাতীয় সঙ্গীত। স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। চারিদিকে লাল-সবুজ-সাদা পতাকার রঙে ভরে ওঠে নদীর ধারের পরিবেশ। তবে উদযাপনের আনন্দের মধ্যেই রাজ্যপালের বক্তব্য উপস্থিত সবার মনে এক বিশেষ চিন্তার জন্ম দেয়—দেশ স্বাধীন হলেও, নিজের রাজ্য থেকে দূরে গিয়ে অনেক শ্রমিক এখনও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন।

Advertisements

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজ্যপালের (C V Ananda Bose) এই মন্তব্য শুধু সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্টও ভিন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার ঘটনায় ন’টি রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে। ফলে বিষয়টি এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

অনুষ্ঠান শেষে রাজ্যপাল স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও করেন। তিনি জানিয়ে দেন, সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করা হবে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন চালু এবং আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর।

দিনের শেষভাগে গান্ধী ঘাটে ভিড় জমে যায় সাধারণ মানুষের। অনেকে এসে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের এলাকার সমস্যা তুলে ধরেন। রাজ্যপাল (C V Ananda Bose) মনোযোগ সহকারে সেসব শুনে নোট নেন। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হয় যে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর তাঁদের পাশে রয়েছে।

সব মিলিয়ে, ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের এই অনুষ্ঠান শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি—এটি হয়ে উঠেছে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি সংহতি ও সুরক্ষার প্রতিশ্রুতির মঞ্চ। এখন দেখার, রাজ্যপালের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলার শ্রমিকেরা কতটা নিরাপদ হয়ে উঠতে পারেন।