শ্রমিক অধিকার রক্ষায় সক্রিয় সুপ্রিম কোর্ট, ৯ রাজ্যকে তলব

বাংলায় কথা বলার কারণে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ নতুন নয়। তবে এ বার বিষয়টি সরাসরি পৌঁছে গিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতে (Supreme Court)…

Supreme Court Summons 9 States Over Harassment of Bengali Migrant Workers

বাংলায় কথা বলার কারণে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ নতুন নয়। তবে এ বার বিষয়টি সরাসরি পৌঁছে গিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতে (Supreme Court) । পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের তরফে দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) পশ্চিমবঙ্গ-সহ মোট ন’টি রাজ্যের কাছে হলফনামা তলব করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, বাংলার শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের খোঁজে গিয়ে বারবার হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, কখনও স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে, আবার কখনও পুলিশি অভিযানে। শুধু তাই নয়, তাঁদের প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র ও নথি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি সন্দেহে আটক, মারধর এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে দাবি উঠেছে।

বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ এই মামলার শুনানিতে ওডিশা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, হরিয়ানা এবং পশ্চিমবঙ্গ — এই ন’টি রাজ্য সরকারকে নোটিস পাঠিয়ে তাঁদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী, প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতে বলেন, “শুধু বাংলায় কথা বলার কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের অপমান, নির্যাতন ও হেনস্থা করা হচ্ছে। তাঁদের কাছে ভোটার কার্ড, আধার, রেশন কার্ড— সব নথি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি তকমা দিয়ে আটক করা হচ্ছে।”

   

প্রশান্ত ভূষণের দাবি, আদালত যেন অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করে, যাতে কোনও শ্রমিককে এই অভিযোগে আটক রাখা না হয়। তাঁর বক্তব্য, “পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু অযথা আটকে রেখে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা অমানবিক।” এই প্রেক্ষিতে বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে যে, যে রাজ্যে কোনও পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করছেন, সে রাজ্যের সরকারের তাঁদের পরিচয় যাচাই করার অধিকার রয়েছে। তবে সেই প্রক্রিয়ায় মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন হওয়া উচিত নয়— এই ইঙ্গিতও আদালতের বক্তব্যে স্পষ্ট।

মামলার নথি অনুযায়ী, মূলত বিজেপি শাসিত আটটি রাজ্যেই এই ধরনের ঘটনার অভিযোগ বেশি। কাজের খোঁজে বাংলার শ্রমিকরা নির্মাণ ক্ষেত্র, কলকারখানা, খনির কাজ, কৃষি শ্রম ও অন্যান্য সেক্টরে যান। কিন্তু সেখানকার কিছু জায়গায় ভাষাগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে অনেক সময় শ্রমিকেরা আতঙ্কে নিজের পরিচয় লুকোতে বাধ্য হন বা বাড়ি ফিরে যেতে চান, যার ফলে তাঁদের আয় ও জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Advertisements

এই পরিস্থিতিতে আদালতের হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা শুধু মানবাধিকার নয়, সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের মধ্যেও পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ফলে এখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে, তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা নিতে চলেছে যাতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা নিরাপদে কাজ করতে পারেন।

প্রশান্ত ভূষণের যুক্তি অনুসারে, এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে আদালতের কঠোর নির্দেশ প্রয়োজন। বিশেষত, যখন নথিপত্র সত্ত্বেও কাউকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে আটক করা হচ্ছে, তখন তা শুধু আইনবিরোধী নয়, বরং একপ্রকার সাংবিধানিক লঙ্ঘনও। আদালতের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত এই মামলার অগ্রগতি নজরে রাখা হবে।

বাংলার শ্রমিক সংগঠনগুলি মনে করছে, যদি আদালত কড়া নির্দেশ দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কমে যাবে। অন্যদিকে, অভিযুক্ত রাজ্যগুলির অনেকেই এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ফলে, আগামী দিনে তাঁদের জবাবের ওপর নির্ভর করবে মামলার পরবর্তী দিকনির্দেশ। এই মামলা শুধু বাংলার নয়, দেশের কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সম্মানের লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।