ট্রাম্পের নতুন দাবি! ‘‘ভারত-পাকিস্তান শান্তি আমার কৃতিত্ব’’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (US President Donald Trump ) বৃহস্পতিবার আবারও দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের (India-Pakistan Ceasefire) সমাধান করেছেন,…

US President Donald Trump Offers Mediation as India-Pakistan Tensions Rise

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (US President Donald Trump ) বৃহস্পতিবার আবারও দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের (India-Pakistan Ceasefire) সমাধান করেছেন, যা তাঁর মতে, পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারত। ওভাল অফিসে দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন, “যদি আপনি ভারত ও পাকিস্তানের দিকে তাকান… বিমানগুলো আকাশ থেকে ভূপাতিত হচ্ছিল। ছয়-সাতটি বিমান ধ্বংস হয়েছিল। তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল, সম্ভবত পারমাণবিক। আমরা এটি সমাধান করেছি।” তবে, ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে এই যুদ্ধবিরতি দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও)-এর মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে, এবং এতে কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছিল না।

ট্রাম্পের দাবি ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই দাবি নতুন নয়। গত ১০ই মে থেকে তিনি একাধিকবার দাবি করেছেন যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে “পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক” যুদ্ধবিরতি তাঁর মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে জানিয়েছিলেন যে, যদি তারা সংঘর্ষ বন্ধ করে, তবে আমেরিকা তাদের সঙ্গে “বড় ধরনের বাণিজ্য” করবে। তবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বারবার জানিয়েছেন যে এই যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণভাবে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সরাসরি আলোচনার ফলাফল। জয়শঙ্কর রাজ্যসভায় বলেছেন, “২২শে এপ্রিল পাহাড়গঞ্জে সন্ত্রাসী হামলার পর অপারেশন সিন্দুর শুরু হয়। এই সময়ে মোদি এবং ট্রাম্পের মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি।”

   

অপারেশন সিন্দুর ও সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের এপ্রিলে জম্মু ও কাশ্মীরের পাহাড়গঞ্জে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত অপারেশন সিন্দুর শুরু করে। এই অপারেশনের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের পাঁচটি যুদ্ধবিমান এবং একটি বড় বিমান ধ্বংস করে, যা পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোর উপর বড় ধরনের ক্ষতি করে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং জানিয়েছেন, এই সংঘর্ষ ৮০ থেকে ৯০ ঘণ্টার মধ্যে এতটাই তীব্র ছিল যে পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব বাধ্য হয়ে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনার প্রস্তাব দেয়। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে এই যুদ্ধবিরতি ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত ছিল, এবং এতে কোনো বৈদেশিক মধ্যস্থতার প্রয়োজন হয়নি।

ট্রাম্পের বাণিজ্য কৌশল ও ভারতের অবস্থান
ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে এই সংঘর্ষ বন্ধ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি বলেছিলাম, আপনারা যুদ্ধ করতে চাইলে করুন, তবে আমরা কোনো বাণিজ্য চুক্তি করব না।” তিনি আরও জানান, এই কৌশলের ফলে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ করে। তবে, ভারত এই দাবি পুরোপুরি খারিজ করেছে। জয়শঙ্কর বলেছেন, “যুদ্ধবিরতির সঙ্গে বাণিজ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।” এদিকে, ট্রাম্প ১লা আগস্ট থেকে ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন, যা রাশিয়ার তেল ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের কারণে। পাকিস্তানের উপর শুল্ক ১৯%, যা এপ্রিলে ঘোষিত ২৯% থেকে কম। ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি এবং তাদের “বিশাল তেলের মজুদ” উন্নয়নে সহায়তার ঘোষণা করেছেন।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের দাবি
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসেছে তাঁর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় শুক্রবারের বৈঠকের প্রাক্কালে, যেখানে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, তিনি মনে করেছিলেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সমাধান করা সবচেয়ে সহজ হবে, কিন্তু এটি “সবচেয়ে কঠিন” হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন যে গত ছয় মাসে তিনি ছয়টি যুদ্ধের সমাধান করেছেন, যার মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ অন্যতম। তিনি এই কৃতিত্বের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিদার বলেও মনে করেন। তবে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিটের বক্তব্য অনুযায়ী, ট্রাম্প গত ছয় মাসে প্রতি মাসে গড়ে একটি শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতি করেছেন, যার মধ্যে ভারত-পাকিস্তান, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, এবং ইসরায়েল-ইরানের সংঘর্ষ অন্তর্ভুক্ত।

Advertisements

ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উপর প্রভাব
ট্রাম্পের এই দাবি ভারত-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। প্রাক্তন কূটনীতিক বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছেন, ভারতের এই যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি প্রত্যাখ্যান করায় তিনি বিরক্ত হয়েছেন, যা ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপের একটি কারণ হতে পারে। জুন মাসে কানাডায় জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি উত্তপ্ত ফোনালাপ হয়, যেখানে ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করেন। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোদি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন যে এটি দুই দেশের সামরিক আলোচনার ফল। এই ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

পাকিস্তানের অবস্থান
পাকিস্তান ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে এবং ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম প্রস্তাব করেছে। তবে, ভারতের দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বই যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিল, কারণ ভারতীয় বিমান বাহিনীর আক্রমণে তাদের বড় ক্ষতি হয়েছিল।

ট্রাম্পের বারবার দাবি সত্ত্বেও, ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি তাদের নিজস্ব সামরিক আলোচনার ফলাফল। এই ঘটনা ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি কীভাবে ভারতের কূটনৈতিক নীতি এবং আঞ্চলিক শান্তির উপর প্রভাব ফেলে, সেদিকে নজর রাখবে গোটা বিশ্ব।