জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) কিশ্তওয়ারের চসোতি (বা চিসোতি) গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভয়াবহ ক্লাউডবার্স্টের ঘটনায় অন্তত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের অধিকাংশই মচাইল মাতার বার্ষিক যাত্রায় অংশ নেওয়া তীর্থযাত্রী। এছাড়াও শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন এবং কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬০ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, তবে দুর্গম পার্বত্য এলাকা ও প্রবল বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে চসোতি গ্রামে এই বিপর্যয় ঘটে। এই গ্রামই মচাইল মাতার মন্দিরে যাওয়ার শেষ মোটরযোগ্য পয়েন্ট। সেখান থেকে ৮.৫ কিমি পায়ে হেঁটে তীর্থযাত্রীদের ৯,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মন্দিরে পৌঁছতে হয়। ঘটনার সময় শত শত ভক্ত যাত্রাপথে অবস্থান করছিলেন। ক্লাউডবার্স্টের ফলে প্রবল জলস্রোত ও কাদা গ্রামের দিকে ধেয়ে আসে, ভেঙে দেয় একাধিক তাবু ও অস্থায়ী কাঠামো। একটি ‘লঙ্গর’ (ভক্তদের জন্য স্থাপিত কমিউনিটি কিচেন) সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (CISF) এক কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এবং আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁরা অস্থায়ী নিরাপত্তা দায়িত্বে সেখানে মোতায়েন ছিলেন।
জম্মু পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল বি.এস. তুতি জানান, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং কিশ্তওয়ারের জেলা শাসক পঙ্কজ কুমার শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুততর করার নির্দেশ দেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানান, “চসোতি এলাকায় ব্যাপক ক্লাউডবার্স্ট হয়েছে, যা বড় ধরনের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। প্রশাসন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছে।”
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, সঠিক তথ্য পৌঁছাতে সময় লাগছে, তবে উদ্ধারকাজের জন্য সমস্ত সংস্থান মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজ্যের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিঙ্হা শোকপ্রকাশ করে বলেন, “চসোতি, কিশ্তওয়ারের ক্লাউডবার্স্টে প্রাণহানিতে গভীরভাবে মর্মাহত। আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সেনা, পুলিশ, এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ-এর সব বাহিনীকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছি।”
শুধু জম্মু ও কাশ্মীরই নয়, উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশও মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার নন্দপ্রয়াগে ভূমিধসের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই উত্তরকাশীর ধরালি ও হারশিলে ৫ আগস্টের ক্লাউডবার্স্ট ও ফ্ল্যাশ ফ্লাডে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশে বুধবার রাত থেকে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ৩৯৬টি রাস্তা বন্ধ, বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং যানবাহন ভেসে গেছে। শিমলা, কুল্লু, কিন্নৌর এবং লাহুল-স্পিতি জেলায় ব্যাপক ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। মৌসম দফতর হিমাচল প্রদেশে আগামী ২০ আগস্ট পর্যন্ত ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি করেছে। প্রশাসনের তরফে পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও পর্যটকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।