কেন্দ্রের কাছে ৪৫৬৩ কোটি টাকার দাবি তুলে ফের হাই কোর্টে রাজ্য

রাজ্যে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা ১০০ দিনের কাজের (মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট – MGNREGA) পরিষেবা চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল…

Kolkata High Court suicide attempt

রাজ্যে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা ১০০ দিনের কাজের (মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট – MGNREGA) পরিষেবা চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট (High Court)। গত জুন মাসে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালী চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল—যে কোনও শর্তে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট থেকে প্রকল্প চালু করতে হবে। আদালত রাজ্য সরকারকে সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল, যাতে গ্রামীণ শ্রমিকরা আবার এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন।

তবে অভিযোগ, নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত বঞ্চিত দিনমজুররা তাঁদের প্রাপ্য বকেয়া পাননি। সেই কারণে ফের কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার আদালতে একটি আবেদন জানানো হয়, যাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে রাজ্যের কাছে বকেয়া টাকা মুক্তির নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়।

   

রাজ্যের আবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গের জন্য MGNREGA-র অর্থ বকেয়া রয়েছে। এই সময়ে শ্রমিকরা তাঁদের মজুরি পাননি, যার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। রাজ্য সরকার আদালতে জানিয়েছে, কেন্দ্রের কাছে বর্তমানে বকেয়া পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪,৫৬৩ কোটি টাকা। এই টাকা দ্রুত পরিশোধের জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

আদালত পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে অনন্তকালের জন্য ‘ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে’ দেওয়া যায় না। যদি সত্যিই দুর্নীতি হয়ে থাকে, তবে তা রোধে কেন্দ্র যেকোনও শর্ত আরোপ করতে পারে। চাইলে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ শর্ত আরোপ করতেও কেন্দ্রের কোনও বাধা নেই।

প্রধান বিচারপতি আরও স্পষ্ট করে বলেন, কেন্দ্র চাইলে কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠাতে পারে। এর ফলে টাকার লেনদেনে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে এবং দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

Advertisements

এছাড়া ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, দুর্নীতি প্রতিরোধে নজরদারির পাশাপাশি কেন্দ্র চাইলে রাজ্যের সব জেলায় তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন তৈরির স্বাধীনতাও থাকবে কেন্দ্রের কাছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, হাই কোর্টের পূর্ববর্তী নির্দেশে বলা হয়েছিল যে ১০০ দিনের প্রকল্পের সুবিধা যেন গোটা রাজ্যের মানুষের কাছে পৌঁছায়, সেই বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রকল্পটি মূলত গ্রামীণ দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য আয়ের সুযোগ তৈরির উদ্দেশ্যে চালু হয়েছিল, কিন্তু প্রায় আড়াই বছর ধরে অর্থবরাদ্দ বন্ধ থাকায় বহু পরিবার আর্থিক অনটনে ভুগছে।

এই পরিস্থিতিতে হাই কোর্টে রাজ্যের নতুন আবেদন রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্কের নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পূর্বে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এবং সেই কারণেই অর্থ বরাদ্দ স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের দাবি, এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এবং এর ফলে সাধারণ শ্রমিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এখন দেখার বিষয়, হাই কোর্ট এই বিষয়ে কী নির্দেশ দেয় এবং কেন্দ্রীয় সরকার বকেয়া অর্থ দ্রুত মুক্তি দেয় কি না। কারণ, গ্রামীণ অর্থনীতির একটি বড় অংশই এই প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল, এবং সময়মতো অর্থ ছাড় না হলে পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে।