দিল্লিতে হাত মেলানো, বাংলায় কী হবে? অভিষেকের সাফ জবাব

দিল্লিতে ‘দোস্তি’, বাংলায় ‘কুস্তি’—এই রাজনৈতিক (TMC on West Bengal Election)  সমীকরণ নতুন কিছু নয়। জাতীয় স্তরে বিরোধী শিবিরে একাধিক দল মুখোমুখি হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক…

TMC Declares It Will Contest Upcoming West Bengal Elections Alone

দিল্লিতে ‘দোস্তি’, বাংলায় ‘কুস্তি’—এই রাজনৈতিক (TMC on West Bengal Election)  সমীকরণ নতুন কিছু নয়। জাতীয় স্তরে বিরোধী শিবিরে একাধিক দল মুখোমুখি হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক রাজনীতিতে তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। এই দ্বৈত চরিত্রের রাজনীতি ভারতের গণতান্ত্রিক চিত্রের এক অনন্য দিক, আর তা ফের স্পষ্ট হয়ে উঠছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।

দিল্লির রাজনীতিতে আপাতত কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে সহ একাধিক দল একসঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পতাকা তলে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্য এক—২০২৯ নয়, বরং ২০২৪-এর লোকসভা ভোটেই বিজেপি বিরোধী শক্তিকে এক মঞ্চে আনা। কিন্তু যখনই আঞ্চলিক বা রাজ্যস্তরের নির্বাচনের প্রশ্ন আসে, তখনই সেই জোটের ছত্রছায়া ম্লান হয়ে যায়। কারণ, প্রতিটি রাজ্যে স্থানীয় শক্তিগুলি নিজেদের জমি ছাড়তে রাজি নয়।

   

বাংলার ক্ষেত্রেও চিত্র একই রকম। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপি। কিন্তু তার পরেই রাজ্যের রাজনীতিতে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। লোকসভা নির্বাচনের আগে একাধিকবার তৃণমূল নেতারা কংগ্রেস ও বামের সঙ্গে আলোচনার আভাস দিলেও, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। তার বড় কারণ, ২০১১ সালের পর থেকেই বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, তৃণমূল বিজেপি বিরোধী মঞ্চে কথা বললেও, রাজ্যের নির্বাচনে তাদের কোনও জায়গা দেয় না।

চলতি বছরের শেষ দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন (TMC on West Bengal Election)  হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে শাসক তৃণমূল একাই লড়বে। বিজেপিও স্বতন্ত্রভাবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের জোট ইতিমধ্যেই কয়েকটি উপনির্বাচন ও পঞ্চায়েত ভোটে একসঙ্গে কাজ করেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—আসন্ন নির্বাচনে কি ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কোনও ছোঁয়া দেখা যাবে?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জাতীয় রাজনীতির সমীকরণ রাজ্যের ভোটে খুব কমই প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে বাংলায়, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন ও ভোটব্যাঙ্ক বহু বছর ধরে স্থায়ী। উপরন্তু, রাজ্যের বিরোধী রাজনীতিতে কংগ্রেসের আসনসংখ্যা খুবই সীমিত, আর বামের ভোটশেয়ারও অনেকটাই কমে গিয়েছে। ফলে তৃণমূলের কাছে কংগ্রেস-বাম জোট বড় কোনও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

Advertisements

তবে রাজনীতিতে সমীকরণ মুহূর্তে বদলে যায়। ২০২৪ লোকসভা ভোটে বিজেপি রাজ্যে যে ফল করেছে, তা শাসকদলের জন্য সতর্কবার্তা। বিজেপি এই বার্তা পেয়েছে যে তারা তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে সক্ষম। অন্যদিকে, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের কাছে এই নির্বাচন সুযোগ এনে দেবে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করার।

দিল্লিতে যেমন আপাতত বিরোধী শিবিরে ঐক্যের বার্তা দেওয়া হচ্ছে, বাংলায় তেমন কোনও সুর মেলেনি। বরং এখানে বিরোধীরা নিজেদের শক্তি অনুযায়ী আলাদা আলাদা পথেই এগোচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে—রাজ্যে তারা একাই বিজেপিকে মোকাবিলা করবে। অপরদিকে কংগ্রেস-বামের বক্তব্য, তৃণমূলের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে তারা বিকল্প রাজনীতি গড়ে তুলবে।

ফলে বোঝাই যাচ্ছে, দিল্লির ‘দোস্তি’ আর বাংলার ‘কুস্তি’ আগামী নির্বাচনী মরশুমেও বজায় থাকবে। বাইরে বন্ধুত্বের হাত মেলালেও, রাজ্যের মাটিতে ভোটযুদ্ধ হবে প্রত্যেকের নিজস্ব রণকৌশল মেনে। আর এই দ্বিমুখী রাজনীতি—জাতীয় ঐক্য বনাম আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা—ভারতের রাজনীতির অন্যতম চিরন্তন বাস্তব হয়ে রইল।