এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Recruitment Scam) মামলায় ফের বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই একযোগে অভিযান চালায় তারা নিউটাউন ও কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে। ইডি সূত্রে খবর, নিউটাউনের বিলাসবহুল আবাসন ‘আইডিয়াল ভিলা’-তে ১৬টি ভিলা কেনা হয়েছে বিপুল অর্থ খরচ করে। তদন্তকারীদের দাবি, এই অর্থ এসেছে বহুল আলোচিত এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি থেকে। কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমেই এই সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান।(SSC Recruitment Scam)
তদন্তে উঠে এসেছে, প্রতিটি ভিলাই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ, যার দাম কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত। মোট ১৬টি ভিলার বাজারমূল্য কয়েকশো কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা। ইডি মনে করছে, এই ভিলা ক্রয়ের পেছনে জড়িত থাকতে পারেন প্রসন্ন রায় নামে এক ব্যবসায়ী, যিনি ইতিমধ্যেই এই মামলার প্রেক্ষিতে নজরে রয়েছেন।
প্রোমোটিং সংস্থার অফিসে তল্লাশি
নিউটাউনের পাশাপাশি ইডি পৌঁছে যায় পার্ক স্ট্রিটে আইডিয়াল রিয়েল এস্টেটের অফিসে। জানা গিয়েছে, এই সংস্থাই ‘আইডিয়াল ভিলা’ প্রকল্পের প্রোমোটার। অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ নথি ও ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করেছে ইডি। সেই সমস্ত নথি খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে অর্থ লেনদেনের সুত্র ও ক্রেতাদের পরিচয় স্পষ্ট হয়। তদন্তকারীরা বিশেষভাবে খুঁজছেন— কে বা কারা প্রকৃত ক্রেতা, অর্থ কোথা থেকে এল এবং লেনদেন কোন পথে সম্পন্ন হল।
প্রসন্ন রায়ের যোগসাজশের সন্দেহ
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রসন্ন রায়ের নাম একাধিকবার উঠে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে। তিনি নাকি তৎকালীন কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং সেই সূত্রেই দুর্নীতির টাকা ঘুরপথে বিনিয়োগ করা হয়েছে রিয়েল এস্টেট খাতে। প্রসন্ন রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের বা ঘনিষ্ঠদের নামে একাধিক সম্পত্তি কিনেছেন, যা আসলে নিয়োগ দুর্নীতির অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে।
টাকার উৎস অনুসন্ধান
তদন্তকারীরা এখন ভিলা ক্রয়ের পুরো টাকা কোথা থেকে এল, তা জানার চেষ্টা করছেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নেওয়া বিপুল অর্থ প্রথমে একাধিক শেল কোম্পানির মাধ্যমে ঘুরিয়ে আনা হয়, তারপর বিনিয়োগ করা হয় বিলাসবহুল সম্পত্তি কেনায়। এই কৌশল ব্যবহার করে দুর্নীতির টাকা ‘হোয়াইট’ করার চেষ্টা হয়েছিল বলে সন্দেহ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া
নিউটাউনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেও ভিলাগুলি প্রায় খালি ছিল, হঠাৎ করেই কয়েক মাস আগে একাধিক নতুন মালিকের নাম রেজিস্ট্রিতে আসে। তবে ক্রেতাদের কেউই এখানে বসবাস করছেন না, যা ইডির সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে। স্থানীয়দের কথায়, “ভিলাগুলো যেন আসল মালিকের ব্যবহারের জন্য নয়, বরং বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে রাখা হয়েছে।”
ইডির পরবর্তী পদক্ষেপ
সূত্রের খবর, ইডি শীঘ্রই প্রসন্ন রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করতে পারে। পাশাপাশি, যাদের নামে এই ভিলাগুলি কেনা হয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে প্রত্যেককে জেরা করার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনে সম্পত্তিগুলির ওপর ‘অস্থায়ী বাজেয়াপ্তি’ জারি করতেও পারে ইডি, যাতে তদন্ত চলাকালীন সেগুলি বিক্রি বা হস্তান্তর করা না যায়।
এই অভিযান যে তদন্তে নতুন মোড় আনবে, তা নিয়ে সংশয় নেই তদন্ত মহলে। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই বহু রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীর নাম জড়িয়ে পড়েছে। নিউটাউন ও পার্ক স্ট্রিটের এই হানা তাতে আরও একাধিক নতুন নাম ও লেনদেনের খোঁজ এনে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।