স্বাধীনতা দিবসের আগে সোনার দামে বড় পতন, ক্রেতাদের মুখে হাসি

ফের দেশজুড়ে সোনার দামে পড়েছে বড় ধাক্কা। টানা তিনদিন ধরে হলুদ ধাতুর দর নিম্নমুখী। চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকেই দাম কমতে শুরু করেছে, আর বৃহস্পতিবারেও সেই…

middle-class-in-panic-gold-price-close-to-90-thousand

ফের দেশজুড়ে সোনার দামে পড়েছে বড় ধাক্কা। টানা তিনদিন ধরে হলুদ ধাতুর দর নিম্নমুখী। চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকেই দাম কমতে শুরু করেছে, আর বৃহস্পতিবারেও সেই প্রবণতা অব্যাহত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের ওঠানামা, ডলারের দামে পরিবর্তন, এবং বিশ্ব অর্থনীতির নানা চাপে এই পতন ঘটছে। আগস্টের মাঝামাঝি এসে ২২ ক্যারাট সোনার দাম নেমে এসেছে ৯২ হাজার টাকার গণ্ডিতে, যা কিছুদিন আগেও ছিল প্রায় ৯৩ হাজার টাকার উপরে। ফলে বিয়ে বা উৎসবের কেনাকাটার পরিকল্পনা করা ক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

কলকাতায় বৃহস্পতিবার সকালে ২২ ক্যারাট সোনার প্রতি ১০ গ্রাম দাম ছিল প্রায় ₹৯২,৮০০ থেকে ₹৯২,৯৫০-এর মধ্যে। ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ১০ গ্রামে ₹১,০১,৩০০ টাকার কাছাকাছি। গত সপ্তাহে এই একই মানের সোনা বিক্রি হচ্ছিল প্রায় ₹১,০২,২০০ টাকায়, অর্থাৎ মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম কমেছে প্রায় ₹৯০০-₹১,০০০। অন্যদিকে রুপোর দামও সামান্য হলেও কমেছে। প্রতি কেজি রুপোর দাম বর্তমানে ₹১,১৭,০০০ থেকে ₹১,১৮,০০০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, যা আগের তুলনায় প্রায় ₹৫০০-₹৬০০ কম।

   

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতিতে কিছুটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত, সুদের হার নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের অবস্থান, এবং বিশ্ব বাজারে ডলারের দামের সাম্প্রতিক ওঠানামা সরাসরি সোনার দামে প্রভাব ফেলেছে। সাধারণত ডলারের দাম কমলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ে, কিন্তু বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সোনার চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। এছাড়া, চীন ও ইউরোপের বাজার থেকেও সোনার ক্রয়চাহিদা সামান্য হ্রাস পেয়েছে, যা দামের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

ভারতে সোনার দামের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে আমদানি খরচ, শুল্ক এবং মুদ্রা বিনিময় হার। ডলারের তুলনায় টাকার দাম সামান্য বেড়েছে, ফলে সোনার আমদানি কিছুটা সস্তা হয়েছে। এর ফলও পড়েছে খুচরো বাজারে। অন্যদিকে, বিয়ের মরশুম ও বড় উৎসব যেমন দুর্গাপুজো ও দীপাবলির এখনও কিছুটা সময় বাকি থাকায় বাজারে সোনার চাহিদা ততটা চড়েনি। খুচরো ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, দাম যদি এভাবে কিছুটা কমতে থাকে, তবে পুজোর আগে বাজারে বড়সড় কেনাকাটা দেখা যেতে পারে।

Advertisements

রাজ্যের সোনার ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ধরনের দামের পতন সাধারণত অল্প সময়ের জন্যই স্থায়ী হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি বদলালে আবার দাম বাড়তেও পারে। তাই যারা সোনা কেনার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য এখনই সময় হতে পারে সবচেয়ে উপযুক্ত। অনেকেই মনে করছেন, আগামী সপ্তাহে দামের আরও কিছুটা পতন হলে বিয়ের গয়না বা বিনিয়োগের জন্য সোনা কেনার হিড়িক পড়বে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে বৃহস্পতিবার সোনার দাম ছিল প্রতি আউন্স প্রায় ১,৯১০ থেকে ১,৯২০ মার্কিন ডলার। গত সপ্তাহের তুলনায় এই দামও প্রায় ১৫-২০ ডলার কম। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে নতুন কোনও ইতিবাচক খবর আসে বা বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় কোনও পরিবর্তন হয়, তবে সোনার দাম আবার দ্রুত উল্টো পথে উঠতে পারে।

সব মিলিয়ে, আগস্টের মাঝামাঝি সোনার দাম কমে যাওয়ায় খুশি সাধারণ ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা। বিয়ে, উৎসব বা বিনিয়োগ—যে কারণেই হোক, অনেকেরই এখন চোখ বাজারের উপর। আগামী কয়েক দিন দামের গতিপ্রকৃতি কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদি দাম আরও কমে, তবে দেশজুড়ে সোনার দোকানগুলোতে ভিড় বাড়বে বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।