ইউপিআই-ভিত্তিক আয়ের উপর কি ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়া যায়? জানুন সত্য

ভারতের আর্থিক খাতে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI) একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। দৈনন্দিন লেনদেনকে সহজ করার পাশাপাশি, ইউপিআই এখন ব্যক্তিগত ঋণের (Personal Loan) ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি…

Can You Secure a Personal Loan Using UPI-Based Income in India?

ভারতের আর্থিক খাতে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI) একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। দৈনন্দিন লেনদেনকে সহজ করার পাশাপাশি, ইউপিআই এখন ব্যক্তিগত ঋণের (Personal Loan) ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ইউপিআই-ভিত্তিক ডিজিটাল আয়ের উপর কি সত্যিই ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়া সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই যে ভারতের ডিজিটাল ঋণ ব্যবস্থা দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, এবং ইউপিআই-ভিত্তিক লেনদেন এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণ কী?
ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণ হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে ঋণগ্রহীতারা ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে ছোট মেয়াদের বা কম পরিমাণের ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ঐতিহ্যবাহী ব্যাঙ্কিং পদ্ধতির পরিবর্তে, এই ঋণগুলি ইউপিআই-এর মাধ্যমে লেনদেনের ইতিহাস এবং অন্যান্য ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ব্যবহার করে ক্রেডিট যোগ্যতা মূল্যায়ন করে। ফোনপে, পেটিএম, গুগল পে-এর মতো অ্যাপগুলি এখন ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি)-এর সঙ্গে সহযোগিতায় এই ধরনের ঋণ প্রদান করছে। এই প্রক্রিয়ায় ঋণের আবেদন থেকে শুরু করে টাকা বিতরণ পর্যন্ত সবকিছু ডিজিটালভাবে সম্পন্ন হয়, যা মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সম্ভব।

   

কীভাবে কাজ করে এই ঋণ?
ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ। আপনি যখন ইউপিআই অ্যাপে লেনদেন করেন, তখন আপনার আর্থিক আচরণের একটি ডিজিটাল রেকর্ড তৈরি হয়। ঋণদাতারা এই তথ্য ব্যবহার করে (আপনার অনুমতি সাপেক্ষে) আপনার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা মূল্যায়ন করে। অনুমোদনের পর ঋণের পরিমাণ আপনার ইউপিআই-লিঙ্কড ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাৎক্ষণিকভাবে জমা হয়। পরিশোধের ক্ষেত্রেও স্বয়ংক্রিয় ডেবিট সুবিধা রয়েছে, যা নির্দিষ্ট তারিখে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কিস্তি কেটে নেয়। এই প্রক্রিয়া দ্রুত এবং কাগজপত্রের প্রয়োজন ন্যূনতম।

ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণের জনপ্রিয়তা
ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণের জনপ্রিয়তা বাড়ছে কয়েকটি মূল কারণে:

  • সুবিধা: ঘরে বসে কয়েক মিনিটের মধ্যে ঋণের জন্য আবেদন এবং তা পাওয়া যায়।
    আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: ব্যাঙ্কিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত বা সীমিত ক্রেডিট ইতিহাসের মানুষদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।
    খরচ কার্যকর: ঋণদাতাদের জন্য কম ঝুঁকি এবং প্রক্রিয়াকরণ খরচ কম হওয়ায় এটি সাশ্রয়ী।

এই ধরনের ঋণ সাধারণত ছোট পরিমাণের, যেমন কয়েক হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকার মধ্যে হয়। এগুলি জরুরি খরচ, ছোট ব্যবসার প্রয়োজন বা ‘কিনুন এখন, পরে পরিশোধ করুন’ (বিএনপিএল) সুবিধার জন্য উপযুক্ত।

ইউপিআই-ভিত্তিক আয়ে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা
ঐতিহ্যবাহী ঋণের জন্য ব্যাঙ্কগুলি সাধারণত বেতনের প্রমাণ বা আয়কর রিটার্নের মতো নথি চায়। তবে, ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণের ক্ষেত্রে, ডিজিটাল লেনদেনের ইতিহাসই আয়ের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। যারা গিগ অর্থনীতিতে কাজ করেন, ফ্রিল্যান্সার বা ছোট ব্যবসায়ী, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে সুবিধাজনক। ইউপিআই লেনদেনের নিয়মিততা এবং পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ঋণদাতারা ক্রেডিট স্কোর তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্কের ফার্স্টমানি ঋণের মতো স্কিমে প্যান এবং আধার কার্ডের মাধ্যমে ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করে ৫০,০০০ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া সম্ভব, এবং এর জন্য আয়ের প্রমাণ বা বেতনের স্লিপের প্রয়োজন নেই।

Advertisements

চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি
ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণের সুবিধা থাকলেও কিছু ঝুঁকি রয়েছে:

  • অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ: সহজ প্রাপ্তির কারণে অনেকে তাদের সামর্থ্যের বাইরে ঋণ নিতে পারেন।
    তথ্য গোপনীয়তা: ডিজিটাল তথ্যের উপর নির্ভরতার কারণে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি থাকে।
    জালিয়াতি: অনেক অপ্রমাণিত অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্যের অপব্যবহার করতে পারে।

এই ঝুঁকি এড়াতে, আরবিআই-নিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম যেমন ক্রেডিটবি, বাজাজ ফিনসার্ভ বা আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া উচিত। এছাড়া, ঋণের শর্তাবলী, সুদের হার এবং কিস্তির পরিমাণ ভালোভাবে বোঝা জরুরি।

পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব
পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে এলাকায়, ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণ কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। কলকাতার মতো শহরে তরুণ পেশাদাররা জরুরি খরচ মেটাতে এই ঋণ ব্যবহার করছেন। তবে, আর্থিক সাক্ষরতার অভাব এখনও একটি চ্যালেঞ্জ। রাজ্য সরকার এবং ব্যাঙ্কগুলি ডিজিটাল আর্থিক শিক্ষার উপর জোর দিচ্ছে, যাতে ব্যবহারকারীরা এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারেন।

ইউপিআই-ভিত্তিক আয়ের উপর ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়া এখন সম্ভব এবং এটি ভারতের আর্থিক খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই ব্যবস্থা তরুণ পেশাদার, গিগ কর্মী এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ক্রেডিটে প্রবেশাধিকার সহজ করেছে। তবে, দায়িত্বশীল ঋণ গ্রহণ এবং আর্থিক সাক্ষরতা এই সুবিধার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। ইউপিআই-ভিত্তিক ঋণ ভারতের আর্থিক ভবিষ্যৎকে নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এবং এর সঠিক ব্যবহার কৃষি থেকে ব্যবসা—সব খাতেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।