রাজস্থানের (Rajasthan) দৌসা জেলায় ঘটে গেল এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। খাটু শ্যাম মন্দিরে পুজো দিয়ে ফেরার পথে পুণ্যার্থী বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। তাঁদের মধ্যে ৩ জন মহিলা ও ৭ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া অন্তত ১২ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বুধবার ভোরে, যখন পুণ্যার্থীরা মন্দির থেকে নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতরা সকলে উত্তরপ্রদেশের এটাওয়ার বাসিন্দা। খাটু শ্যাম মন্দির দর্শন শেষে পিকআপ ভ্যানে করে তাঁরা ফিরছিলেন। দৌসা জেলার একটি এলাকায় হঠাৎ করেই তাঁদের ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং সামনে থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। সংঘর্ষ এতটাই তীব্র ছিল যে পিকআপ ভ্যানটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়, ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১০ জন। স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন এবং পুলিশকে খবর দেন।
দৌসার (Rajasthan) পুলিশ সুপার সাগর রানা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “খাটু শ্যাম মন্দির দর্শন করে ফেরার সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েন পুণ্যার্থীরা। এতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অধিকাংশকে জয়পুরের এসএমএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, ভোরের দিকে দৃশ্যমানতা কম থাকায় অথবা অতিরিক্ত গতি থাকার কারণে চালক ভ্যানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ হয়। স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার তীব্রতা এতটাই ছিল যে অনেক যাত্রী ভ্যানের ভিতরে আটকে পড়েন এবং তাঁদের বের করতে যথেষ্ট সময় লেগেছে। প্রথমে আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় জয়পুরের বড় হাসপাতালে রেফার করা হয়।
এদিকে, এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এটাওয়ার গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃতদের পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দৌসা প্রশাসন জানিয়েছেন, মৃত ও আহতদের পরিবারকে দ্রুত আর্থিক সাহায্য এবং সহায়তা দেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই এলাকায় বহুবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভারী যানবাহন এবং দ্রুতগতির গাড়ি চলাচলের কারণে পথ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি। তাঁরা প্রশাসনের কাছে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার, সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের দাবি তুলেছেন।
পুলিশের একটি বিশেষ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। ট্রাকের চালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, ভ্যানের চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাই এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হতে পারে।
রাজস্থানে(Rajasthan) সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী গাড়িগুলিতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই এবং চালকদের দীর্ঘক্ষণ অবিরত গাড়ি চালানো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং নিয়মিত যানবাহন পরীক্ষা না হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।
দৌসা জেলার এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একদিকে যেমন শোকাহত পরিবারের সান্ত্বনা নেই, অন্যদিকে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, তার জন্য প্রশাসনেরও সচেতন পদক্ষেপ প্রয়োজন। খাটু শ্যাম মন্দির দর্শন শেষে পুণ্যার্থীদের এই করুণ মৃত্যু রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশ—দুই রাজ্যকেই শোকাহত করেছে।