উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় মঙ্গলবারের অধিবেশন প্রশ্নোত্তর পর্বে আচমকাই তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হল এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জল জীবন মিশন’-এর আওতায় রাজ্যে কতটা কাজ হয়েছে, তার খতিয়ান তুলে ধরছিলেন রাজ্যের জল শক্তি মন্ত্রী স্বতন্ত্র দেব সিং। কিন্তু তাঁর বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানালেন সমাজবাদী পার্টির (samajwadi-party) বিধায়ক মোহম্মদ ফহিম ইরফান।
ফহিমের দাবি, মন্ত্রী(samajwadi-party) ভুল তথ্য দিচ্ছেন। বাস্তবে বহু এলাকায় এখনও বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছয়নি, জলাধারের অবস্থা নাজেহাল, আর সরকারি রিপোর্টে সাফল্যের ছবি তুলে ধরা হচ্ছে—যা সত্যের সঙ্গে মেলে না। এই অভিযোগে স্বতন্ত্র দেব সিং ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। নিজের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সপা বিধায়ককে উদ্দেশ করে রীতিমতো আঙুল তুলেই বলে বসেন—“সাহস থাকলে বউয়ের নামে দিব্যি খেয়ে বলুন, কোনও কাজ হয়নি।”
এই মন্তব্য উচ্চারিত হতেই বিধানসভায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী শিবিরে থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন—একজন মন্ত্রী হিসেবে স্বতন্ত্র দেব সিং কি এমন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রসঙ্গ টেনে আনতে পারেন? বিধানসভায় ভাষার শালীনতা ও গাম্ভীর্যের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়।
সমাজবাদী পার্টি (samajwadi-party) এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। ফহিম ইরফান পরে সাংবাদিকদের বলেন, “মন্ত্রী আমার বক্তব্যের জবাব তথ্য দিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু উল্টে ব্যক্তিগত মন্তব্য করে শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে একজন মন্ত্রীর এই ধরনের ভাষা ব্যবহার অনভিপ্রেত এবং অনুচিত।” তিনি যোগ করেন, “আমি চাই, মন্ত্রী প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।”
বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে বিজেপি মন্ত্রীরা ক্রমেই আক্রমণাত্মক এবং অশালীন মন্তব্য করছেন। এই ধরনের আচরণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে, শাসকদল বিজেপির বিধায়করা দাবি করেছেন, স্বতন্ত্র দেব সিং কেবল বিরোধীর অভিযোগের জবাব দিয়েছেন এবং তাঁর বক্তব্যকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম প্রকল্প ‘জল জীবন মিশন’ নিয়ে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকায় প্রতিটি পরিবারে পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিষ্কার পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। মন্ত্রীর দাবি, উত্তরপ্রদেশে এই প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, বহু গ্রামে জল সরবরাহের কাজ সম্পূর্ণ, এবং আরও অনেক এলাকায় কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। কিন্তু ফহিম ইরফান বলেন, “বাস্তবে বহু গ্রামে ট্যাঙ্ক খালি, পাইপলাইন থাকলেও জল নেই, আর সরকার কাগজে কলমে সাফল্য দেখাচ্ছে।”
এই তথ্য-প্রতিবাদের লড়াইয়ের মধ্যেই আসে ‘বউয়ের নামে দিব্যি’ মন্তব্য, যা আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় রাজনীতিতে বিরোধী-শাসক বাক্যযুদ্ধ নতুন কিছু নয়, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ টেনে আনা বিধানসভার ভাষণের শালীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ঘটনার পরে বিধানসভায় একাংশ দাবি করে, মন্ত্রীকে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। যদিও স্বতন্ত্র দেব সিং এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তিনি তাঁর আসনে ফিরে গিয়ে আর আলোচনায় অংশ নেননি।
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমেও এই ঘটনা ভাইরাল হয়ে যায়। কেউ কেউ মন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘আবেগের বহিঃপ্রকাশ’ বলে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ একে ‘অশালীন ও অনভিপ্রেত’ বলে কটাক্ষ করেছেন। টুইটার ও ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে মিম ও ট্রল ছড়িয়ে পড়েছে।
এই বিতর্কে শেষ পর্যন্ত কোনও সমাধান হবে কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু দিনের শেষে, প্রকৃত প্রশ্ন থেকে সরে গিয়ে এখন সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে—উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় উচ্চারিত সেই একটি বাক্য: “বউয়ের নামে দিব্যি খেয়ে বলুন।”