ভারতে সোনার পর এবার রূপার বাজারেও আসতে চলেছে বড় পরিবর্তন। ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় ভারত সরকার রূপার গয়না ও পণ্যে বাধ্যতামূলক হ্যালমার্কিং (Silver Hallmarking) চালুর পরিকল্পনা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে সোনার গয়নাতে এই ব্যবস্থা চালু থাকলেও, এবার তা রূপাতেও প্রযোজ্য হতে পারে। সূত্রের খবর, আগামী ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হতে পারে।
কেন রূপায় হ্যালমার্কিং জরুরি?
ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী প্রলহাদ যোশি জানিয়েছেন, সোনার হ্যালমার্কিং চালুর পর বাজারে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই রূপাতেও এই ব্যবস্থা আনার দাবি উঠেছে। Mathrubhumi সূত্রে জানা গেছে, রূপার পণ্যের বিশুদ্ধতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে বাজারে রূপার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ২০১০ সালের ৯০০ টন থেকে ২০২৪ সালে রূপার গয়নার ব্যবহার বেড়ে হয়েছে ২,৭০০ টন। বিশেষত মহিলাদের মধ্যে পায়েল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, যা রূপার গয়নার মোট বাজারের প্রায় ৫০% দখল করে রেখেছে।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (IBJA) এই নতুন প্রস্তাবে কিছু সংশোধনের দাবি তুলেছে। তাদের বক্তব্য, রূপার বড় আকারের পণ্য— যেমন বাসনপত্র, আসবাবপত্র বা মূর্তি— হ্যালমার্কিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া লজিস্টিক ও পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দেবে। অন্যদিকে ছোট গয়নার ক্ষেত্রে, যেগুলির মূল্য গড়ে ৩,০০০ টাকার মধ্যে, সেখানে হ্যালমার্কিং করলে উৎপাদন খরচ এবং শেষপর্যন্ত বিক্রয়মূল্যও বেড়ে যাবে।
আইবিজেএ-র জাতীয় সম্পাদক সুরেন্দ্র মেহতা ১৮ জুলাই BIS-কে পাঠানো এক চিঠিতে প্রস্তাব দিয়েছেন যে, জুয়েলারিরা নিজেরাই প্রতিটি পণ্যের জন্য ইউনিক হ্যালমার্ক কোড তৈরি করতে পারে এবং সেই কোড ইনভয়েসে উল্লেখ করা যেতে পারে। এতে খরচও কমবে এবং প্রক্রিয়াও সহজ হবে।
ভোক্তাদের স্বার্থে পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞদের মতে, রূপার গয়নায় অনেক সময় খাঁটি ধাতুর বদলে অ্যালয় ব্যবহার হয়, যা ক্রেতার পক্ষে বোঝা কঠিন। লন্ডন-ভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা মেটালস ফোকাসের চিরাগ শেঠ জানিয়েছেন, তরুণ প্রজন্ম এখন সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য রূপার গয়নার দিকে ঝুঁকছে এবং তারা গুণমানের নিশ্চয়তা চাইছে।
সরকারি অনুমোদিত হ্যালমার্কিং প্রক্রিয়া চালু হলে, ক্রেতারা নিশ্চিত হতে পারবেন যে তারা যা কিনছেন তা মানসম্পন্ন ও খাঁটি। সোনার ক্ষেত্রে যেমন কেভিয়েট, ওজন ও শনাক্তকরণ চিহ্ন বাধ্যতামূলক, তেমনই রূপাতেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে রূপার বাজারে স্বচ্ছতা বাড়বে, ভেজাল ও প্রতারণার সুযোগ কমবে এবং ভারতীয় রূপা শিল্প আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছতে পারবে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী প্রক্রিয়ায় কিছু নমনীয়তা আনা না হলে ছোট ব্যবসায়ীদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে।
সব মিলিয়ে, সেপ্টেম্বর থেকে রূপায় হ্যালমার্কিং বাধ্যতামূলক হলে দেশের গয়না শিল্পে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে—যেখানে খাঁটি রূপার মূল্য ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে।