পেটিএমকে অনলাইন পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটরের অনুমোদন দিল RBI

ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ফিনটেক কোম্পানি পেটিএমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংস্থা Paytm Payments Services Ltd. (পিপিএসএল) মঙ্গলবার একটি বড় মাইলফলক ছুঁয়েছে।  রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সংস্থাটিকে…

Paytm

ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ফিনটেক কোম্পানি পেটিএমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংস্থা Paytm Payments Services Ltd. (পিপিএসএল) মঙ্গলবার একটি বড় মাইলফলক ছুঁয়েছে।  রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সংস্থাটিকে অনলাইন পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর হিসেবে কার্যক্রম চালানোর আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে। এ খবর সংস্থাটি নিজেই এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ের মাধ্যমে জনসমক্ষে আনে, যা পরে সংবাদ সংস্থা পিটিআই প্রকাশ করে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে পেটিএম পেমেন্টস সার্ভিসেস এখন দেশজুড়ে ব্যবসায়ীদের জন্য ডিজিটাল পেমেন্ট সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও ম্যানেজমেন্ট সেবা প্রদান করতে পারবে। অনলাইন পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর হিসেবে অনুমোদন পাওয়া মানে সংস্থাটি বিভিন্ন মার্চেন্টের কাছ থেকে অনলাইন লেনদেন সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট নিয়ম ও সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে গ্রাহকের টাকা পৌঁছে দেবে।

   

পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট ও আরবিআইয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া:
অনলাইন পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর হিসেবে কাজ করতে হলে আরবিআইয়ের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। ২০২০ সালে আরবিআই ডিজিটাল পেমেন্ট সংক্রান্ত নতুন গাইডলাইন জারি করে, যেখানে সব পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটরকে নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর আওতায় আনার কথা বলা হয়। এর লক্ষ্য ছিল গ্রাহকের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা।

পেটিএম পেমেন্টস সার্ভিসেস পূর্বে এই অনুমতির জন্য আবেদন করেছিল, তবে তখন কিছু প্রক্রিয়াগত কারণে চূড়ান্ত অনুমোদন মেলেনি। আরবিআই সংস্থাটিকে পুনরায় আবেদন করতে বলে। সেই অনুযায়ী পিপিএসএল সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি, সিস্টেম সিকিউরিটি অডিট রিপোর্ট এবং আর্থিক কাঠামোর স্বচ্ছতার প্রমাণ জমা দেয়। দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে এবার আরবিআই তাদের অনুমতি প্রদান করল।

পেটিএমের প্রতিক্রিয়া:
পেটিএমের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “আরবিআইয়ের এই অনুমোদন আমাদের ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। আমরা ভারতের কোটি কোটি গ্রাহক ও লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ীর কাছে নিরাপদ, দ্রুত ও সহজ অনলাইন পেমেন্ট সমাধান পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই অনুমতি পাওয়ার ফলে তারা নতুন নতুন প্রযুক্তি ও পেমেন্ট সলিউশন চালু করতে পারবে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের (SME) জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে।

অনলাইন পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটরের ভূমিকা:
অনলাইন পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর (PA) মূলত এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গ্রাহকের পেমেন্ট সংগ্রহ করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ক্রেতা যদি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে কিছু কেনে এবং UPI, কার্ড, নেট ব্যাংকিং বা ওয়ালেটের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে, তবে পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর সেই অর্থ গ্রহণ করে নিরাপদে ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে।

এক্ষেত্রে আরবিআইয়ের অনুমোদন পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গ্রাহকের অর্থের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। অনুমোদিত অ্যাগ্রিগেটররা গ্রাহকের তথ্য এনক্রিপশন, ফ্রড ডিটেকশন সিস্টেম এবং মাল্টি-লেয়ার অথেনটিকেশন ব্যবহার করে লেনদেন সুরক্ষিত রাখে।

বাজারে প্রভাব:
পেটিএমের জন্য এই অনুমতি একটি বড় ব্যবসায়িক সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করবে। ভারতে ডিজিটাল পেমেন্ট বাজার বর্তমানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউপিআই (UPI) লেনদেনের সংখ্যা প্রতিমাসে নতুন রেকর্ড গড়ছে, এবং অনলাইন শপিং, ফুড ডেলিভারি, টিকিট বুকিং সহ প্রায় সব সেক্টরে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার বেড়ে গেছে।

Advertisements

এই পরিস্থিতিতে পেটিএম এখন আরও বেশি সংখ্যক মার্চেন্টকে তাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করতে পারবে। ক্ষুদ্র দোকান থেকে বড় কর্পোরেট—সব ধরণের ব্যবসায়ীকে তারা নিরাপদ অনলাইন পেমেন্ট সেবা দিতে সক্ষম হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পেটিএমের রাজস্ব বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গ্রাহক ও ব্যবসায়ীর জন্য সুবিধা:
আরবিআই অনুমোদনের ফলে পেটিএম পেমেন্টস সার্ভিসেস এখন-

বিভিন্ন পেমেন্ট মোড অফার করতে পারবে — UPI, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাংকিং, ওয়ালেট ইত্যাদি।
দ্রুত লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ — টাকা পৌঁছানোর সময় কমবে।
উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা — ফ্রড মনিটরিং, ডাটা এনক্রিপশন, OTP ভেরিফিকেশন।
বিলিং ও রিকনসিলিয়েশন সাপোর্ট — ব্যবসায়ীরা সহজে লেনদেনের হিসাব মিলিয়ে নিতে পারবে।
নতুন ইনোভেটিভ সলিউশন — সাবস্ক্রিপশন পেমেন্ট, ইএমআই অপশন, আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণ।

ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে প্রতিযোগিতা:
ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট বাজারে বর্তমানে Razorpay, Cashfree, PayU, PhonePe, BharatPe সহ বেশ কয়েকটি বড় খেলোয়াড় সক্রিয়। আরবিআই অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে পেটিএম এখন তাদের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পেটিএমের বিদ্যমান ব্র্যান্ড ভ্যালু, বৃহৎ ব্যবহারকারী বেস এবং প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো এই প্রতিযোগিতায় তাদের সুবিধা দেবে। বিশেষ করে যেহেতু পেটিএম ইতিমধ্যেই UPI, ওয়ালেট, কার্ড পেমেন্ট সহ বহুমুখী সেবা প্রদান করে, তাই মার্চেন্টদের জন্য একক সমাধান হিসেবে এটি আকর্ষণীয় হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
পেটিএম সূত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তারা পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর ব্যবসায় নতুন ফিচার যোগ করবে। এর মধ্যে রয়েছে AI-ভিত্তিক ফ্রড ডিটেকশন, রিয়েল-টাইম পেমেন্ট অ্যালার্ট, এবং গ্রাহক ও ব্যবসায়ীর জন্য উন্নত ড্যাশবোর্ড। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গ্রহণের সুবিধা প্রসারিত করার দিকেও সংস্থাটি জোর দিচ্ছে।

রিজার্ভ ব্যাংকের এই অনুমোদন শুধু পেটিএমের জন্য নয়, সমগ্র ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমের জন্যই ইতিবাচক সংকেত। এটি দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং লেনদেন ব্যবস্থাকে নিরাপদ, স্বচ্ছ ও সহজ করবে।
ডিজিটাল পেমেন্টের দ্রুত প্রসারের যুগে, এই ধরনের নিয়ন্ত্রিত ও অনুমোদিত সংস্থা গ্রাহক ও ব্যবসায়ীর আস্থা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে—এমনটাই মনে করছেন শিল্প বিশেষজ্ঞরা।