অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: আদিবাসী উপজাতি সম্প্রদায়ের (Tribal) মানুষেরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন—এই অভিযোগে সরব হলেন আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন প্রান্তের আদিবাসী নেতৃত্ব ও বাসিন্দারা। মঙ্গলবার বিকেল তিনটা নাগাদ আলিপুরদুয়ার মহকুমা শাসকের দপ্তরে একটি স্মারকলিপি জমা দেন তারা। অভিযোগ, অন্যান্য জাতির কিছু ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য ও জাল নথি ব্যবহার করে উপজাতি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করছেন এবং এর ফলে সরকারি চাকরি, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে প্রকৃত উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক আদিবাসী পুরুষ ও মহিলা ঐক্যবদ্ধভাবে আলিপুরদুয়ার জেলা শহরে মিছিল করে আসেন। হাতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা “প্রকৃত উপজাতিদের অধিকার চাই” এবং “জাল সার্টিফিকেট বন্ধ করো” স্লোগান দিতে দিতে মহকুমা শাসকের দপ্তরে পৌঁছান।
আদিবাসী নেতৃত্বদের অভিযোগ, বিগত কয়েক বছরে এই ভুয়ো উপজাতি সার্টিফিকেট ইস্যু করার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এ ধরনের জাল নথি ব্যবহারকারীরা সরকারি সংরক্ষিত পদে চাকরি, শিক্ষাবৃত্তি, জমি সংক্রান্ত সুবিধা এবং অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। এর ফলে আসল উপজাতি পরিবারগুলি ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
একজন আদিবাসী নেতা, সোমনাথ মুর্মু বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষরা এই মাটিতে জন্মেছেন, বড় হয়েছেন। কিন্তু আজ আমাদের অধিকার অন্যরা কেড়ে নিচ্ছে। ভুয়ো সার্টিফিকেটধারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে প্রকৃত উপজাতি সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।”
অন্যদিকে, মহিলা নেতৃত্ব চন্দ্রিমা বাস্কি জানান, “মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে এবং স্বাস্থ্য সুবিধায় সংরক্ষিত কোটার সুযোগ প্রয়োজন। কিন্তু এই ভুয়ো সার্টিফিকেটধারীদের কারণে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
স্মারকলিপিতে তারা কয়েকটি মূল দাবি উত্থাপন করেছেন—
ভুয়ো উপজাতি সার্টিফিকেট বাতিল ও তার জন্য দায়ীদের শাস্তি।
উপজাতি সার্টিফিকেট ইস্যুর ক্ষেত্রে কড়া যাচাই প্রক্রিয়া।
উপজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য পৃথক পর্যবেক্ষণ কমিটি।
শিক্ষা, চাকরি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রকৃত উপজাতিদের অগ্রাধিকার।
মহকুমা শাসক সমস্ত দাবিগুলি নথিভুক্ত করে দ্রুত তদন্তের আশ্বাস দেন। তিনি জানান, “অভিযোগগুলি যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে এবং প্রকৃত উপজাতি সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”
স্থানীয় সমাজকর্মী মহেন্দ্র টোপ্পো বলেন, “এটি কেবল প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক সংকট। দীর্ঘমেয়াদে উপজাতি সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে বহু বছর ধরেই উপজাতি সম্প্রদায়রা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার। সরকারি সংরক্ষণ নীতি কার্যকর হলেও, তাতে ভুয়ো সার্টিফিকেটধারীদের প্রবেশ এই নীতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
মঙ্গলবারের এই বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি জমা দেওয়ার ঘটনা আদিবাসী সমাজের মধ্যে একটি নতুন ঐক্য ও সচেতনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের লড়াই চলবে যতদিন না ভুয়ো উপজাতি সার্টিফিকেট বন্ধ হচ্ছে এবং প্রকৃত উপজাতি মানুষরা তাদের প্রাপ্য সুযোগ পাচ্ছেন।