রিফান্ডে ছাড়, ফাইলিংয়ে নয় — নতুন আয়কর আইনে দ্বৈত বার্তা

নতুন আয়কর বিল ২০২৫ (Income Tax Bill 2025) লোকসভায় পাস হয়েছে, যা এই প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, করদাতারা যদি দেরিতে বা সংশোধিত রিটার্ন দাখিল…

Income Tax Bill 2025: What was it and why was it being withdrawn? All you need to know

নতুন আয়কর বিল ২০২৫ (Income Tax Bill 2025) লোকসভায় পাস হয়েছে, যা এই প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, করদাতারা যদি দেরিতে বা সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করেন, তাহলেও আর্থিক বছরে অতিরিক্ত প্রদত্ত করের রিফান্ড দাবি করতে পারবেন। তবে বিলটি ছোট করদাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গ্রহণ করেনি, যা কর ফাইলিং প্রক্রিয়াকে সহজ করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছিল।

আইন অনুযায়ী নতুন ধারাটি (ধারা ৪৩৩) স্পষ্ট করেছে — “এই অংশের অধীনে প্রত্যেক রিফান্ড দাবি ধারা ২৬৩ অনুসারে রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে করতে হবে।” অর্থাৎ রিফান্ড পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো আয়কর রিটার্ন ফাইল করা, অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে না।

   

এর ফলে ছোট করদাতারা, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিকরা, যাদের মোট আয় করমুক্ত সীমার নিচে হলেও উৎসে কর কর্তন (TDS) কাটা হয়েছে, তারাও রিফান্ড পাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, কম আয়ের করদাতাদের জন্য শুধুমাত্র রিফান্ড দাবি করতে ফাইলিং বাধ্যতামূলক রাখা একদিকে বাড়তি ঝামেলা তৈরি করছে, অন্যদিকে অনিচ্ছাকৃতভাবে দেরি হলে জরিমানা বা শাস্তির ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।

সংসদীয় কমিটির সুপারিশ উপেক্ষিত
এর আগে একটি সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল, শুধুমাত্র রিফান্ড পাওয়ার জন্য রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া উচিত। তারা সতর্ক করেছিল যে, এই বাধ্যবাধকতা অনেক ছোট করদাতাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে শাস্তির মুখে ফেলতে পারে।

কমিটির মতে, “যাদের আয় করযোগ্য সীমার নিচে, কিন্তু উৎসে কর কেটে নেওয়া হয়েছে, তাদের রিফান্ড পাওয়ার জন্য আইনত রিটার্ন দাখিল করতে বাধ্য করা উচিত নয়। নাহলে অ-দাখিলের কারণে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।” কিন্তু নতুন আয়কর বিল এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। ফলে ছোট করদাতাদের জন্য ফাইলিংয়ের ঝামেলা রয়ে গেল আগের মতোই।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতামত:
বিডিও ইন্ডিয়ার পার্টনার (গ্লোবাল এমপ্লয়ার সার্ভিসেস, ট্যাক্স অ্যান্ড রেগুলেটরি সার্ভিসেস) প্রীতি শর্মা বলেছেন, “নতুন আইনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর সরলতা। পুরনো আইনের তুলনায় সাধারণ মানুষ অনেক কম পরিশ্রমে এটি বুঝতে পারবেন।”

তিনি আরও বলেন, বিলটি সিলেক্ট কমিটির অধিকাংশ প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তবে করদাতাদের এখনো নির্ধারণ করতে হবে কোন কর ব্যবস্থা (পুরনো বা নতুন) তাদের জন্য বেশি সুবিধাজনক হবে, রিটার্ন ফাইলের আগে।

শর্মা এটাও জানিয়েছেন যে, বাজেট ২০২৫-এ ঘোষিত কর হারের কোনো পরিবর্তন এই বিলের মাধ্যমে করা হয়নি। অর্থাৎ কর কাঠামো অপরিবর্তিত থাকছে, শুধু ভাষা ও গঠন আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।

আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট:
এই আইনটি একটি ৩১-সদস্য বিশিষ্ট সংসদীয় প্যানেলের সুপারিশের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পাণ্ডা। কমিটির বেশিরভাগ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, রিফান্ড পাওয়ার জন্য ফাইলিংয়ের বাধ্যবাধকতা শিথিল করার প্রস্তাবটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
নতুন আয়কর বিল ভাষা ও কাঠামোয় আধুনিক হলেও করদাতাদের রিফান্ড পাওয়ার জন্য আগের মতোই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এতে সাধারণ করদাতাদের জন্য আইন বোঝা সহজ হলেও, ছোট আয়ের করদাতারা এখনো অতিরিক্ত TDS ফেরত পেতে বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন ফাইল করতে হবে।

অনেকের আশা ছিল যে, এই বিল অবশেষে সেই প্রক্রিয়াকে বাদ দেবে — কিন্তু তা হয়নি। ফলে একদিকে যেমন কর কাঠামোর স্বচ্ছতা ও সরলতা বেড়েছে, অন্যদিকে ছোট করদাতাদের জন্য অতিরিক্ত কাগজপত্রের ঝামেলা ও সময়ের অপচয় কমানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।