মঙ্গলবার ভারতীয় শেয়ারবাজারে (Share Market) তীব্র ধস নেমে এসেছে। আগের দিনের সমস্ত লাভ মুছে দিয়ে দিনের শেষে বাজার লালচিহ্নে বন্ধ হয়েছে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE) সেনসেক্স ৩৫০ পয়েন্টের বেশি পড়ে ৮০,২৩৬ পয়েন্টে গিয়ে থামে, আর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (NSE) নিফটি৫০ সূচক ১০০ পয়েন্ট প্রায় হারিয়ে ২৪,৫০০-এর নিচে, অর্থাৎ ২৪,৪৯৯ স্তরে গিয়ে বন্ধ হয়।
দিনের প্রধান পারফর্মার:
৩০ শেয়ারের সেনসেক্স সূচকে মারুতি সুজুকি, টেক মাহিন্দ্রা, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, এনটিপিসি এবং সান ফার্মা ছিল শীর্ষ গেইনারের তালিকায়। অন্যদিকে বাজাজ ফাইন্যান্স, ট্রেন্ট, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার (HUL), ইটারনাল এবং এইচডিএফসি ব্যাংক ছিল দিনের শীর্ষ লুজারের মধ্যে।
বৃহত্তর বাজার সূচকে, নিফটি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস সূচক ১ শতাংশের বেশি পড়ে যায়। সেক্টরভিত্তিক হিসাবে, ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস ২৫/৫০ সূচক দিনের শেষে ০.৯০ শতাংশ কমে বন্ধ হয়, অন্যদিকে ফার্মা সূচক ০.৬৯ শতাংশ বেড়ে দিনের ইতিবাচক সেক্টর হিসেবে উঠে আসে।
বাজারের সূচনা কেমন ছিল:
মঙ্গলবারের লেনদেন শুরু হয়েছিল দুর্বল সুরে। সকাল ৯:১৫-এ বাজার খোলার সাথে সাথে সেনসেক্স প্রায় ১৫০ পয়েন্ট পড়ে ৮০,৪৬৩-এ শুরু হয়, আর নিফটি৫০ ৩৪ পয়েন্ট কমে ২৪,৫৫০-এ ট্রেড করছিল।
লেনদেন শুরুর আগে, জিফট (GIFT) নিফটি কিন্তু শক্তি প্রদর্শন করেছিল। সকাল ৮:৫৮-এ এটি ৭০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ২৪,৬২০-এর ওপরে ট্রেড করছিল, যা আগের দিনের র্যালি বাড়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। প্রি-ওপেন ট্রেডে সেনসেক্স প্রায় ৪০ পয়েন্ট উঠে ৮০,৬৫০-এর কাছাকাছি পৌঁছায়, তবে নিফটি ২০ পয়েন্টের বেশি পড়ে ২৪,৫৬৩-এ নেমে আসে।
প্রেক্ষাপট ও প্রভাবক কারণ:
বাজারের নজর ছিল জুলাই মাসের মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) সংক্রান্ত ডেটার দিকে, যা দিনের মধ্যে প্রকাশিত হওয়ার কথা। এই ডেটা বাজারের মনোভাব এবং সুদের হারের সম্ভাব্য পরিবর্তনে প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্কবিরতির (tariff truce) মেয়াদ বাড়ানোর খবরও বাজারে প্রাথমিকভাবে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। এই পদক্ষেপে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতির আশঙ্কা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে এই খবর ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে এবং তেলের দামে পুনরুদ্ধার দেখা গেছে।
আগের দিনের র্যালির প্রেক্ষাপট:
সোমবারের সেশনে বাজার ছিল চাঙ্গা। সেদিন সেন্সেক্স প্রায় ৭৫০ পয়েন্ট লাফিয়ে ৮০,৬০০-এর ওপরে বন্ধ হয়, আর নিফটি৫০ ২০০ পয়েন্ট প্রায় বেড়ে ২৪,৫৫০-এর ওপরে গিয়ে থামে। এই শক্তিশালী পারফরম্যান্সই অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে মঙ্গলবারের জন্য বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। কিন্তু দিনের লেনদেনের মধ্যে চাপ তৈরি হয় এবং বাজার শেষ পর্যন্ত নেতিবাচক অঞ্চলে চলে যায়।
সেক্টরওয়ারি বিশ্লেষণ:
- আর্থিক সেক্টর: বড় ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির শেয়ার বিক্রির চাপে পড়ে যায়। এইচডিএফসি ব্যাংক, বাজাজ ফাইন্যান্সের বড় পতন সূচককে টেনে নামায়।
- ফার্মা সেক্টর: বাজারের পতনের মধ্যেও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি তুলনামূলক ভালো পারফর্ম করে। সান ফার্মা সহ একাধিক কোম্পানির শেয়ার বেড়েছে।
- অটোমোবাইল: মারুতি সুজুকি ও মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা গেইনার তালিকায় থাকলেও সেক্টরের সামগ্রিক চিত্র মিশ্র ছিল।
বিশ্লেষকদের মতামত:
বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীরা মুদ্রাস্ফীতি ডেটা প্রকাশের আগে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। বৈশ্বিক ইকুইটি বাজারে মিশ্র সেন্টিমেন্ট, ডলারের দামের ওঠানামা এবং অপরিশোধিত তেলের দামের বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে অস্থিরতা বেড়েছে। তারা মনে করছেন, মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার তুলনায় বেশি হলে বাজারে আবারও বিক্রির চাপ তৈরি হতে পারে।
আগামী দিনের দিকনির্দেশ:
বিনিয়োগকারীদের নজর থাকবে জুলাই মাসের মুদ্রাস্ফীতি ডেটা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের (FPI) গতিবিধি-র উপর।
তেলের দাম বাড়তে থাকলে এবং রুপির দরপতন হলে আমদানিনির্ভর সেক্টরগুলিতে চাপ বাড়তে পারে।
ফার্মা ও প্রতিরক্ষা (defence) সেক্টরে স্বল্পমেয়াদি ইতিবাচক গতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবারের বাজার প্রমাণ করল যে এক দিনের র্যালি দিয়ে ট্রেন্ড নির্ধারণ করা যায় না। আগের দিনের শক্তিশালী লাভ মুছে দিয়ে বিনিয়োগকারীরা আবারও সতর্ক মুডে চলে গেছেন। বৈশ্বিক ও দেশীয় উভয় দিক থেকেই যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা বাজারে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ডেটা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ইঙ্গিতের ওপর নির্ভর করেই আগামী দিনের গতি নির্ধারিত হবে।