উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুর (Fatehpur) জেলার রাদিয়া মহল্লায় নওয়াব আবু সামাদের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো মকবরা ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রসূন তিওয়ারি এক চাঞ্চল্যকর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা শক্তি প্রদর্শনের জন্য গিয়েছিলাম। আমাদের কোনও মকবরা ভাঙচুরের উদ্দেশ্য ছিল না।
প্রথমে আমাদের সনাতনী ভাইয়েরা একটি জায়গায় জড়ো হতে শুরু করেছিলেন, এবং প্রশাসন তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যারা মন্দিরে মেয়েদের উত্যক্ত করে বা প্রাঙ্গণে সিগারেট খায়, তাদের বাধা দেওয়ার কোনও চেষ্টা করা হয়নি। তারপর মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু লোক আমাদের উপর পাথর ছুঁড়তে শুরু করে।
এই আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় কিছু লোক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ভাঙচুর করে।” এই ঘটনা ফতেহপুরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
গত ১১ আগস্ট ফতেহপুরের রাদিয়া মহল্লায় নওয়াব আবু সামাদের ঐতিহাসিক মকবরায় একদল জনতা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশ করে এবং মকবরার কিছু অংশ ভাঙচুর করে। প্রসূন তিওয়ারি, যিনি এই ঘটনায় অভিযুক্ত, দাবি করেছেন যে তাদের উদ্দেশ্য ছিল শক্তি প্রদর্শন, কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের পাথর ছোঁড়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এই ঘটনার পর পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে এবং প্রশাসন এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, প্রসূন তিওয়ারির বক্তব্য প্রশাসনের ভূমিকা এবং সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
প্রসূন তিওয়ারি অভিযোগ করেছেন যে প্রশাসন তাদের সমাবেশে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ, যেমন মন্দিরে মেয়েদের উত্যক্ত করা বা ধূমপান, বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, “যখন আমাদের ভাইয়েরা শান্তিপূর্ণভাবে জড়ো হচ্ছিল, তখন প্রশাসন আমাদের থামানোর চেষ্টা করেছে।
কিন্তু অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন যখন পাথর ছুঁড়েছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” এই বক্তব্য প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং স্থানীয় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছে।নির্বাচন কমিশনের
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিবকে দিল্লির সদর দফতরে তলব করেছে। নির্বাচন কমিশন এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে ক্ষুব্ধ। এই ঘটনা শুধুমাত্র ফতেহপুরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা এবং সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
প্রসূন তিওয়ারির বক্তব্য এই ঘটনাকে আরও জটিল করে তুলেছে, কারণ তিনি দাবি করেছেন যে ভাঙচুরটি পরিকল্পিত ছিল না বরং পাথর ছোঁড়ার প্রতিক্রিয়ায় কিছু লোকের ক্ষোভের ফল।
ফতেহপুর পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। জেলা প্রশাসন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, প্রসূন তিওয়ারির বক্তব্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
ফতেহপুরের মকবরা ভাঙচুর ঘটনা এবং প্রসূন তিওয়ারির বক্তব্য রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তাঁর দাবি, ভাঙচুরটি পরিকল্পিত ছিল না বরং পাথর ছোঁড়ার প্রতিক্রিয়ায় ঘটেছে, এই ঘটনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বঙ্গজুড়ে রাজনৈতিক খুনে কড়া বার্তা, আইনশৃঙ্খলায় কড়াকড়ি মমতার
নির্বাচন কমিশনের তলব এবং প্রশাসনের পদক্ষেপ এই ঘটনার তদন্ত ও সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পরিস্থিতি ফতেহপুরে শান্তি ও সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সকল পক্ষের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।