কলকাতা: রাজ্যে একের পর এক রাজনৈতিক নেতার খুনের ঘটনা ঘিরে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মঙ্গলবার দুপুরে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্প নিয়ে মুখ্যসচিবের ডাকা জেলাশাসকদের বৈঠকে হঠাৎ হাজির হয়ে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, প্রকল্পের প্রচার এবং মানুষের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক করণীয় নিয়ে একাধিক নির্দেশ দেন তিনি। সাম্প্রতিক কয়েকটি রাজনৈতিক খুনের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন—শুধু থানার আইসি বা ওসিদের উপর ভরসা করলে হবে না, জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদেরও সরাসরি দায়িত্ব নিতে হবে।
গত কয়েক দিনে হুগলি, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও কোচবিহার-সহ একাধিক জেলায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতাকে খুন করা হয়েছে। কোন্নগরে প্রকাশ্য রাস্তায় এলোপাথাড়ি কোপ মেরে খুন হয়েছেন দাপুটে তৃণমূল নেতা। বাঁকুড়ায় রাতের বেলা গুলি চালিয়ে খুন করা হয়েছে বুথ কনভেনারকে। কোচবিহারে দিনের বেলায় বাজারে গুলি চালিয়ে খুন হয়েছে পঞ্চায়েত প্রধান কুন্তলা রায়ের ছেলে। অন্যদিকে বারুইপুরে মারধর করে খুনের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির এক বুথ সভাপতির হত্যার ঘটনায়। এসব ঘটনার জেরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাপানউতোর চলতে থাকলেও, মুখ্যমন্ত্রীর মতে, পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয়তা বাড়ানোই এখন জরুরি।
মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ সুপার (SP), কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার (CP), আইসি (IC) ও ওসিদের (OC) উদ্দেশে স্পষ্ট নির্দেশ দেন—আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রত্যেককে সরাসরি তদারকি করতে হবে, স্থানীয়ভাবে গোপন খবর সংগ্রহে ইন্টেলিজেন্স বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। কেন আইবি আগে থেকে খবর পাচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা—‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি এমনভাবে চালাতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ প্রকৃত সুবিধা পান। কোথায় কোথায় ক্যাম্প হচ্ছে, তা প্রচার করতে হবে, সহজে পৌঁছনো যায় এমন জায়গায় ক্যাম্পের আয়োজন করতে হবে, এবং সমস্যা সমাধানে লোকেশনভিত্তিক নজরদারি বাড়াতে হবে। এই দায়িত্ব শুধুমাত্র মন্ত্রী বা সিনিয়র অফিসারদের নয়, মাঠপর্যায়ের কর্মীদেরও ভাগ করে দিতে হবে।
এছাড়া, পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant Workers) রাজ্যে ফেরার প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী জানান—শ্রমিকদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসাথী, কৃষক বন্ধু-সহ সব সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং কর্মশ্রী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এই কাজে বিডিওদেরও সরাসরি দায়িত্ব দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী শেষবার্তায় প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন—মানুষের সমস্যার সমাধান দ্রুত এবং কার্যকরভাবে করতে হবে। রাজনৈতিক হিংসা ও খুনের মতো ঘটনাকে রুখতে হলে পুলিশ-প্রশাসনকে মাঠে নেমে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক খুনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, যা পুলিশের উপর সরাসরি চাপ বাড়াবে।