বীরভূম জেলার গুরুত্বপূর্ণ জলাধার তিলপাড়া ব্যারাজের মেরামতি নিয়ে ফের কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব সামনে এল। রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া (Manas Bhunia) মঙ্গলবার সরাসরি অভিযোগ করলেন, ব্যারাজের সংস্কার কাজে বিলম্বের জন্য সম্পূর্ণ দায় কেন্দ্রের। ওই দিন তিনি তিলপাড়া ব্যারাজে মেরামতির কাজ পরিদর্শনে যান এবং সংবাদমাধ্যমের সামনে জানান, সমস্যাটি বহু আগেই চিহ্নিত হলেও কেন্দ্রের উদাসীনতার কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে।
সেচমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের নভেম্বরে তিলপাড়া ব্যারাজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রথম ফাটল ধরা পড়ে। তখনই ব্রিজের প্রথম ডিভাইডারে বড়সড় ক্ষতির চিহ্ন দেখা যায়। রাজ্যের পক্ষ থেকে বিষয়টি তৎক্ষণাৎ কেন্দ্রকে জানানো হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়, দ্রুত মেরামতির ব্যবস্থা করার জন্য। সে সময় কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দেয়, বিশ্ব ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মেরামতির জন্য মোট খরচের ৭০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে, বাকি ৩০ শতাংশ রাজ্য সরকার বহন করবে। কিন্তু, অভিযোগ অনুযায়ী, আশ্বাসের পর আর কোনও অগ্রগতি হয়নি।
মানস ভুঁইয়ার (Manas Bhunia) বক্তব্য, ২০২২ সালের মধ্যে ব্যারাজের ফাটল আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয় যে দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যদি ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কেন্দ্র টাকা দিত, তাহলে আমরা অনেক আগেই কাজ শুরু করে ফেলতাম। কিন্তু যখন দেখলাম কেন্দ্র আর কোনও অর্থ সাহায্য করবে না, তখন রাজ্য নিজের উদ্যোগে কাজ শুরু করতে বাধ্য হয়।”
তবে, শুরু থেকেই প্রকল্পটি নানা বাধার মুখে পড়ে। মূলত বর্ষার সময় নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টির কারণে বারবার কাজ থমকে যায়। সেচমন্ত্রীর বক্তব্য, জুলাই মাসের মধ্যেই মেরামতির কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু জুলাই মাসের বর্ষায় কাজ একাধিকবার বন্ধ রাখতে হয়েছে। বৃষ্টি কমলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ পুনরায় শুরু হয়, কিন্তু ফের অগাস্টের বৃষ্টিতে দেরি হচ্ছে।
বর্তমানে আপাতত বর্ষার মৌসুমে ব্যারাজকে রক্ষা করার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। মেরামতির পূর্ণাঙ্গ কাজ হবে শুষ্ক মৌসুমে, যখন জলস্তর কম থাকবে। সেই সঙ্গে সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন, অন্যান্য ব্যারাজেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে আগেভাগেই সমস্যা শনাক্ত করে মেরামতির ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এই প্রকল্পে প্রযুক্তিগত পরামর্শ নেওয়া হয়েছে আইআইটি রুরকির প্রফেসর ও ড্যাম বিশেষজ্ঞ জুলফিকার আহমেদের কাছ থেকে। পাশাপাশি সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন থেকেও প্রয়োজনীয় সুপারিশ সংগ্রহ করা হয়েছে। রাজ্যের সেচ দপ্তরের দাবি, এই মেরামতির কাজ শেষ হলে তিলপাড়া ব্যারাজ আরও অন্তত কয়েক দশক নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা যাবে।
উল্লেখযোগ্য, তিলপাড়া ব্যারাজ শুধু বীরভূম নয়, আশপাশের জেলাগুলির সেচ ও জল সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কোনও বড় ধরনের ক্ষতি হলে কৃষি এবং পানীয় জলের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। তাই দ্রুত সংস্কার শেষ করার জন্য রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
সার্বিকভাবে, তিলপাড়া ব্যারাজ মেরামতির ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সাহায্য না পাওয়ায় বিলম্ব বেড়েছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রের তরফে এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা, রাজনৈতিক চাপানউতোর শেষ হয়ে দ্রুত কাজ সম্পূর্ণ হবে, যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যারাজ আবার তার পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করতে পারে।