মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) প্রশ্ন তোলে—ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) এর ১৫২ ধারার “অপব্যবহারের সম্ভাবনা” কি আইনটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণার ভিত্তি হতে পারে? এই ধারা এমন কাজকে শাস্তিযোগ্য করে যা “ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করে”।
বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ এই প্রশ্ন করেন ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিজমের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট নিত্য রামকৃষ্ণন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়্যার-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদরাজনের কাছে। বরদরাজনের বিরুদ্ধে আসামের মরিগাঁও থানায় ১৫২ ধারায় এবং BNS-এর আরও কিছু অপরাধে মামলা হয়েছে, একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাঁর গ্রেপ্তার “আসন্ন”।
বেঞ্চ বরদরাজন ও ফাউন্ডেশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশের যেকোনও জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ দেয় এবং কেন্দ্র ও আসাম সরকারকে নোটিশ পাঠায়। কেন্দ্রের পক্ষে ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। আদালত জানায়, এর আগে ৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আরেকটি বেঞ্চ এস.জি. ভোমবাটকেরের আবেদনে একই ধারাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নোটিশ জারি করেছিল।
রামকৃষ্ণনের যুক্তি—BNS-এর ১৫২ ধারা যদিও ভিন্নভাবে লেখা এবং ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ শব্দটি ব্যবহার করেনি, তা মূলত ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারার ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রদ্রোহ আইনেরই আধুনিক সংস্করণ। উল্লেখ্য, IPC-কে প্রতিস্থাপন করে BNS চালু হয়েছিল, যখন সুপ্রিম কোর্ট ১২৪এ ধারার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেটি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়েছিল। তাঁর দাবি—১৫২ ধারা অস্পষ্টভাবে লেখা, যা বিশেষত সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা দমনের বড় হাতিয়ার হতে পারে।
বিচারপতি বাগচী এ বিষয়ে একমত হন এবং বলেন, অস্পষ্ট শাস্তিমূলক বিধান চ্যালেঞ্জ করার বৈধ কারণ। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা বাতিলের নজির টেনে আনেন, যেখানে অস্পষ্ট পরিভাষা কর্তৃপক্ষকে বিরোধী মত দমনের সুযোগ দিয়েছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন, কেদারনাথ সিং মামলার রায় অনুযায়ী ১২৪এ ধারার অভিযোগ তখনই টিকবে, যখন প্রমাণিত হবে যে বক্তব্য বা কাজ সহিংসতা উস্কে দিয়েছে। তাই, ১৫২ ধারার প্রয়োগও একই নীতি মেনে চলতে হবে।
বিচারপতি কান্ত বলেন, সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা কর্মকাণ্ডের একটি নির্দিষ্ট তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়; প্রতিটি মামলার পরিস্থিতি আলাদা। রাজনৈতিক ভিন্নমতকে কখনও সার্বভৌমত্বের হুমকি বলা যায় না। তবে তিনি সতর্ক করেন, ‘সার্বভৌমত্ব’-এর অতিরিক্ত নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া আইন প্রণেতাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
মেহতা প্রশ্ন তোলেন—কোনও আইনের সাংবিধানিকতা চ্যালেঞ্জ করাকে কি আগাম জামিন বা FIR বাতিলের ভিত্তি হিসেবে ধরা যেতে পারে? এর উত্তরে বিচারপতি কান্ত জানতে চান, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে কি না। তাঁর মন্তব্য—মিডিয়ার ক্ষেত্রে অভিযোগ সাধারণত লেখা বা সম্প্রচারিত বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়, তাই হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তা কম।
মেহতা জানান, সাংবাদিকদের আলাদা শ্রেণি হিসেবে দেখা যায় না। এর জবাবে বিচারপতি বাগচী বলেন, আদালতের উদ্দেশ্য সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতার অধিকার ও রাষ্ট্রের তদন্ত ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার অধিকার—দুটির মধ্যে ভারসাম্য রাখা।